বিএনপি সমঝোতার মাধ্যমে শরিকদের ২৮টি আসন ছেড়ে দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ১০টি আসনে শরিক দলের নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসন গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খাঁনকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানোর পর স্থানীয় বিএনপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রাশেদ খাঁন তাঁর দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিলেও উত্তেজনা থামছে না। বিক্ষোভ-মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বিএনপির বড় একটি অংশ।
গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (ফিরোজ) এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী মুর্শিদা জামানের অনুসারীরা কাফনের কাপড় পরে কালীগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায়ও তাঁরা কালীগঞ্জ উপজেলায় দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করেছেন। মনোনয়ন পরিবর্তন না করা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাইফুল ইসলাম নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা।
রাশেদ খাঁন শুক্রবার দল ত্যাগ করার পর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে যোগ দেন রাশেদ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপিতে যোগ দেওয়ার ফলে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে লড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে রাশেদের। নির্বাচনে তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য স্থানীয় বিএনপিকে নির্দেশনা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ঝিনাইদহ-৪ আসনে মো. রাশেদ খাঁন ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করবেন। আপনারা সবাই দলের পক্ষ থেকে রাশেদ খাঁনকে সর্বাত্মক সহায়তা করে বিজয়ী করবেন।’
এ আসন থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামানের সহধর্মিণী মুর্শিদা জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম (হামিদ) দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশেদ খাঁনের ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়ার পর মশালমিছিলের ঘোষণা দেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। পরে মশালমিছিল না করে সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ থানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করেন তাঁরা। সাইফুল ইসলাম ও মুর্শিদা জামান পক্ষের নেতা-কর্মীরা সম্মিলিতভাবে এ কর্মসূচি পালন করেন। দলের কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ আলী জানান, তাঁরা মশালমিছিল করতে চাইলেও বিশেষ কারণে স্থগিত করেছেন। তবে সমাবেশের মাধ্যমে তাঁরা এই মনোনয়ন পরিবর্তন দাবি করেছেন।
অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম (হামিদ) নিজের অনুসারীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করছেন। শনিবার শহরের মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় নেতা-কর্মীদের জানানো হয়েছে, মনোনয়নের বিষয়ে তাঁরা দলের সিদ্ধান্তের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাশেদ খাঁন আজ প্রথম আলোকে জানান, বিএনপির সঙ্গে তাঁর দল যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি তিনি আস্থা রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরেক রহমান চেয়েছেন ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি নির্বাচনে বিজয়ী হব।’
দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের বিষয়ে রাশেদ খাঁন বলেন, ‘যাঁরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাঁদের চাওয়া-পাওয়া থাকা স্বাভাবিক। তবে তাঁরা শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শের প্রতি আস্থা রেখে তারেক রহমানের নির্দেশ মেনে ধানের শীষের পক্ষেই থাকবেন বলে আশা করছি।’