পাল্টাপাল্টি অভিযোগে আটকে গেল শাম্মী-পংকজের মনোনয়নপত্রের বৈধতা

পঙ্কজ নাথ ও শাম্মী আহম্মেদ
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল-৪ আসনে (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়টি ঝুলে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনে আজ রোববার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম এই দুজনসহ সাতজনের বিষয়ে আগামীকাল সোমবার সিদ্ধান্ত জানাবেন।

আরও পড়ুন

আজ সকালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। এ সময় বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ উভয় দেশে নাগরিকত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ। আর শাম্মী আহম্মেদ পংকজ নাথের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনেন।

শাম্মী উল্লেখ করেন, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনে পংকজ নাথের মালিকানা রয়েছে। সেই তথ্য তিনি হলফনামায় গোপন করেছেন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়টি পর্যালোচনা এবং উভয় পক্ষের অভিযোগের বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই শেষে সোমবার সিদ্ধান্ত দেওয়ার ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর পংকজের অনুসারী নেতারা বলছিলেন, তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আকস্মিকভাবে ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেন পংকজ নাথ।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে পংকজ নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল না স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার। কিন্তু আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আমার ঢাকার বাসায় এসে এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য ও প্রমাণাদি আমাকে দেন। ফলে তাঁর মনোনয়নপত্র আইনগতভাবে বাতিল হবে এবং এখানে দলের কোনো প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ জন্য সবার অনুরোধে শেষ সময়ে আমি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিই।’

পঙ্কজ নাথের দাবি, আইনগতভাবে কোনো দ্বৈত নাগরিকের মনোনয়ন জমাদানের আগে তাঁকে একটি দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করা বাধ্যতামূলক। শাম্মী আহম্মেদ এটা না করায় তাঁর মনোনয়ন বৈধ হওয়ার সুযোগ নেই। শাম্মী আহম্মেদ এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমার সব তথ্য এবং সবকিছু বিবেচনা করেই এখানে মনোনয়ন দিয়েছে।’

৬ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল, ৭ প্রার্থী অপেক্ষমাণ

বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সভাকক্ষে এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়।

ছয়টি সংসদীয় আসন থেকে বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্র থেকে মোট ৫৫ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় ছয়জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ ছাড়া সাত প্রার্থীর বিষয়ে অভিযোগসহ নানা কারণে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।

বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে মোট চারজন প্রার্থীর মধ্যে জাকের পার্টির রিয়াজ মোর্শেদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিরাজ খান ও জাতীয় পার্টির (জেপি) আলবার্ট বাড়ৈর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি, মনোনয়নপত্র অসম্পূর্ণ থাকা ও কোর্ট ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়। বরিশাল বাকেরগঞ্জ-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাঁরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির খান ওরফে সাগর, শাহরিয়ার মিঞা ও নুর এ আলম সিকদার। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিলেও সেগুলোতে গরমিল পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া যে অপেক্ষমাণ সাত প্রার্থীর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে তাঁরা হলেন বরিশাল-৪  (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের হৃদয় ইসলাম ওরফে চুন্নু ও একই দলের মো. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে অপেক্ষমাণ রয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাঈনুল ইসলাম ও একই দলের হুমায়ুন কবির। বরিশাল-৩ আসনে ৯ জন, বরিশাল-৫ আসনের ৮ প্রার্থীর সবার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এদিকে বরিশাল-৫ আসনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। এ জন্য আমরা আনন্দিত। শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকব।’