ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখা গেল পড়ে আছে প্রকৌশলীর রক্তাক্ত লাশ

মরদেহ উদ্ধার
প্রতীকী ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) বাহাদুর মিয়াকে (২৪) আটক করেছে পুলিশ।

নিহত প্রকৌশলীর নাম সদরুল আলম (৪২)। তিনি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পূর্ব শেগুরপাড়া গ্রামের মৃত মনিজউদ্দিন মাস্টারের বড় ছেলে। টাইসি করপোরশেন নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন সদরুল।

দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন শাক্তা ইউনিয়নের আরশিনগর এলাকায় ইউনুস আলীর ভাড়াটে বাড়ির চতুর্থ তলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাট থেকে সদরুলের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

ওই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা মো. মানিক জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িওয়ালা ইউনুস আলী চতুর্থ তলার দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাটের দরজায় একাধিকবার ধাক্কা দেন। একপর্যায়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে প্রকৌশলী সদরুলের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি ৯৯৯–এ ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান।

একই ভবনের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ জানান, সদরুল আলমের ফ্ল্যাটটি দুই কক্ষের। তিনি প্রতিদিন সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেন। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত সদরুলের ফ্ল্যাটের দরজা না খোলায় সবার সন্দেহ হয়।

ওই গৃহবধূ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা বাড়িওয়ালাকে জানাই। তিনি এসে দরজায় অনেকক্ষণ ধাক্কা দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দেন। বাড়ির চতুর্থ তলায় পূর্ব পাশের ঘরের ভেন্টিলেটর ভাঙা অবস্থায় ছিল। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’

নিহত সদরুল রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় টাইসি করপোরেশন কোম্পানিতে চাকরি করতেন বলে জানান তাঁর বন্ধু খোকন মিয়া। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার বিকেলে সর্বশেষ সদরুলের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। আমার জানামতে, তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। সদরুল সকালে কাজে গিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফিরে আসতেন। কী কারণে কে বা কারা তাঁকে হত্যা করলে, বিষয়টি বুঝতে পারছি না।’

সদরুলের স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। তাঁরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ছয়–সাত মাস ধরে তিনি ইউনুস আলীর বাড়িতে একা ভাড়া থাকতেন। মাঝেমধ্যে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান এসে থাকতেন। সদরুলের চাচাতো ভাই আহসান হাবিব বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যারা ওর সন্তানকে এতিম করেছে, আমরা তাদের বিচার দাবি করছি।’

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক বাহাদুর মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন অর রশিদ বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে এক প্রকৌশলীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশের মাথায় ও শরীরের তিন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চোর চুরি করার উদ্দেশ্যে ফ্ল্যাটের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছিল। এ সময় ফ্ল্যাটে থাকা ওই ব্যক্তি চোরকে বাধা দিলে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সিআইডির সদস্যরা ক্রাইম সিন থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।