রাত নামলেই কাটা হচ্ছে পাহাড়, তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি

প্রায় ৫০ ফুট উঁচু লম্বাকাটা পাহাড়টির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে। সমতল অংশে তৈরি হচ্ছে বাড়ি। গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের বায়ারপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা বায়ারপাড়া। পাড়ার ভেতরে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু লম্বাকাটা পাহাড়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সারা রাত মাটি কাটার যন্ত্রের শব্দে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া পাহাড়ধসের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী।

গতকাল শনিবার বিকেলে দেখা যায়, লম্বাকাটা পাহাড়টির পশ্চিম অংশের অন্তত ১০ শতক জায়গার মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। সমতল করা একটি অংশে পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে গেছেন কামাল উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য আখতার উদ্দিনের ভাই। যে অংশের মাটি কাটা হয়েছে, সেটির মালিক দুই ভাই সিদ্দিক আহমদ ও ছৈয়দ আহমদ। এরই মধ্যে সেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন সিদ্দিক আহমদ। ছৈয়দ আহমদও বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন কামাল উদ্দিন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, গত বুধবার থেকে প্রতি রাতে ছয়-সাতটি মিনিট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন কামাল। রাতে খননযন্ত্র ও ট্রাকের বিকট শব্দে ঘুমাতে পারেন না সাধারণ মানুষ। মাটি কাটার ফলে পাহাড়টির বিভিন্ন বনজ, ফলদ ও ভেষজ গাছ ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বর্ষায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শওকত ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, কামাল উদ্দিন পাহাড়টির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

তবে পাহাড় কাটায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, পাহাড়টি যাঁদের মালিকানাধীন, তাঁরাই বাড়ি নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটছেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।

গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি খননযন্ত্র ও দুটি ট্রাক জব্দ করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় ওই অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। জড়িত ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোর গঠন খুব বেশি মজবুত না। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার ফলে ভয়াবহ পাহাড় ধস হতে পারে। পাহাড়ে এমন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে, যা পরিবেশের জন্য খুবই অপরিহার্য। পাহাড় ধ্বংসের ফলে সেগুলো বিলীন হয়ে যাবে। পাহাড়ে গাছপালা থাকলে বৃষ্টিপাত হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলা করা সহজ হবে। সচেতনতা সৃষ্টি, আইনের প্রয়োগ এবং জনপ্রতিনিধিদের এ কাজে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলে পাহাড় কাটা রোধ করা সম্ভব।