জমি নিয়ে বিরোধ, ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে অয়ন ওসমানের বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ জেলার মানচিত্র

নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে আবদুস সবুর নামের এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সবুর সোমবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কাছে অয়ন ওসমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান ও অয়ন ওসমানের সহযোগী যুবলীগ কর্মী নাহিদের নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে সবুর উল্লেখ করেন, ‘আমার বাবা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ বক্স মোল্লা ২০২০ সালের জুলাই মাসে মারা যান। আমার বাবার নামে হাজীগঞ্জ মৌজায় পাঁচ দাগে ৪৬ শতাংশ পৃথক জমিতে পাঁচটি বাড়ি রয়েছে। আমরা চার ভাই ও পাঁচ বোন। এই জমিটি আমি, আমার বড় ভাই আবদুস সামাদ মোল্লা, ছোট ভাই আবু সায়েম মোল্লা ও বড় বোন গুলনাহার বেগমের সন্তানেরা ভোগ করছি। এ নিয়ে আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ১৬ জুন রাতে আমার মুঠোফোনে ফোন করে হাজীগঞ্জ ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি কাজী সাগর ১৮ জুন বিকেলে চাষাঢ়া কলেজ রোডে রূপায়ন টাউনের অয়ন ওসমানের অফিসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

কায়েমপুর এলাকার যুবলীগ কর্মী নাহিদও অয়ন ওসমানের সঙ্গে তাঁর অফিসে দেখতে করতে বলেন। ১৮ জুন হাজীগঞ্জ মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে আমাকে সাগর ও নাহিদ জোর করে অটোরিকশায় করে চাষাঢ়ায় অয়ন ওসমানের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, আমার ছোট ভাই আবু সাঈদ মোল্লা, ছোট বোন মাবিয়া সিদ্দিকা, বড় বোন আয়েশা সিদ্দিকা ও তাঁর ছেলে মাসুদকে। কিছুক্ষণ পর সেখানে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুরসহ তাঁর লোকজন আসেন। এ সময় অয়ন ওসমান বলেন, ওই জমির মালিক আবু সাঈদ মোল্লা ও মাবিয়া সিদ্দিকা। ১৯ জুনের মধ্যে ওই জমি তাঁদের বুঝিয়ে দিতে হবে। ওই জমি নিয়ে মামলার বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি পাত্তা দেননি। অয়ন ওসমান আমাকে বলেন, “কোনো মামলা-মোকদ্দমা বুঝি না।” তাঁদের জমি বুঝিয়ে দিতে হবে বলে আমাকে শাসান। না হলে তাঁর লোকজন গিয়ে জমি দখল করে বুঝিয়ে দিয়ে আসবে।’

সবুর মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই জমির মালিক আমার বাবা। জমিটি এখনো এজমালি হিসেবে আছে। জমি নিয়ে আদালতে চারটি মামলা রয়েছে। কিন্তু অয়ন ওসমান মামলার বিষয়টি পাশ কাটিয়ে জমিটি আমাদের বাদ দিয়ে (এক ভাই, এক বোন) বুঝিয়ে দিতে চাপ দেন। আমাকে শাসান। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছি। এ ঘটনায় এসপির কাছে অভিযোগ দিলে তিনি তাঁদের ধরে নিয়ে আসার জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরে আমাদের সামনে সাগর ও নাহিদকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে শাসিয়ে দেওয়া হয়।’

আবু সায়েম মোল্লা বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর দুই বছর পর বড় বোন মাবিয়া সিদ্দিকা, বড় ভাই আবু সাঈদ মোল্লা ও বড় বোন সুফিয়া সিদ্দিকা ওই সম্পত্তি বাবা তাঁদের নামে লিখে দিয়েছেন বলে জানান। অথচ আমরা বাবার ওয়ারিশ আছি নয়জন। এ নিয়ে  ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জালিয়াতি মামলা ও যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করেছি।’

সবুর নামের একজন তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি বলেন, ‘সম্পত্তি নিয়ে তাঁদের ভাইবোনদের মধ্যে ঝামেলা রয়েছে। তাঁদের একজন অয়ন ওসমানের কাছে গেলে দুই যুবক (সাগর ও নাহিদ) সবুরকে ডেকে নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। আমরা ওই যুবককে ডেকে এনে বলে দিয়েছি, তাঁরা যেন এসব নিয়ে না জড়ান। আদালত-পুলিশ প্রশাসন রয়েছে, তারা জমিজমার বিষয়টি দেখবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নাহিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সবুর নামের কাউকে চেনেন না বলে জানান। তিনি বলেন, তাঁর নামে কেউ এসপি বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন কি না, তা–ও তিনি জানেন না। তিনি ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।
সাগরের মুঠোফোনে কল করা হলে রিং হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ ব্যাপারে অয়ন ওসমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।