‘ছেলেটা আর কোনো দিন কাপড়ের জন্য জেদ ধরবে না’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় চালকলের বয়লার বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের একজন পলক দাস। তার বাবা উমাকান্ত দাসের আহাজারি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ দাসপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উমাকান্ত দাসের দুই ছেলে। শীতের নতুন পোশাক কিনে দেওয়ার জন্য বাবার কাছে বায়না করেছিল ছেলেটি। হাতে বেশি টাকা না থাকায় বড় ছেলে সুশান্ত দাসকে পোশাক কিনে দিলেও ছোট ছেলেকে দিতে পারেননি। এতে ছোট ছেলে পলক দাস বাবার সঙ্গে অভিমান করে। বাবা টাকার ব্যবস্থা করে তার জন্য জ্যাকেট, হাতমোজা আর কেডস কেনেন। সেই পোশাক পরে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রোদ পোহাতে যায় সে। তখন পাশের একটি চালকলের বয়লার বিস্ফোরিত হয়ে ছিটকে পড়ে তাদের ওপর। এতে পলকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়।

আজ সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুৎ দাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, আজ সকালে পল্লীবিদ্যুৎ দাসপাড়া এলাকার সাইদুর রহমানের চালকলে শ্রমিকেরা ধান সেদ্ধ করার জন্য বয়লারের চুলায় তুষ ছিটিয়ে পানি গরম করছিলেন। শ্রমিকেরা অন্য কাজে গেলে অতিরিক্ত চাপে বয়লারটি আকস্মিকভাবে বিস্ফোরিত হয়ে একটি মন্দিরের সামনে গিয়ে পড়ে। সেখানে থাকা দাসপাড়া গ্রামের সাগর দাসের স্ত্রী দীপ্তি রানী দাস (৪০), তাঁর মেয়ে পূজা দাস (১১) ও সাগর দাসের ছোট ভাই উমাকান্ত দাসের ছেলে পলক দাস (৯) নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন সাগর দাস ও নিখিল দাস।

স্থানীয় ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হাসান মো. আবদুল হান্নান বলেন, বয়লার বিস্ফোরণে একই পরিবারের মা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হন, আহত হন দুজন। আহত ব্যক্তিদের ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চালকলের বয়লারের অবকাঠামো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। আর বয়লারটি ৫০ গজ দূরে পড়ে রয়েছে। সেখানে চলছে স্বজনদের আহাজারি।

বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় উমাকান্ত দাস তাঁর ছেলে, বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাতিজিকে হারিয়েছেন। আর ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন। উমাকান্ত দাস আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘ছেলেটা আর কোনো দিন কাপড়ের জন্য জেদ ধরবে না।’

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চালকলের মালিক সাইদুর রহমান পলাতক থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।