যশোরে আমন চাষ
তীব্র খরায় ফলন কমার শঙ্কা
স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে আমন চাষে অন্তত তিন ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হন কৃষক। এবার বৃষ্টির পানির অভাবে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা।
ভাদ্রের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। আমন ধানের চারা রোপণ শেষ। কিন্তু যশোরে বৃষ্টি নেই। অনাবৃষ্টিতে আমন ধানের খেত ফেটে চৌচির। রোদে পুড়ছে রোপণ করা ধানের চারা। সেচে বাড়ছে খরচ। বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে আমন চাষে অন্তত তিন ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হন কৃষক। প্রথমত, সেচ দিতে বাড়তি খরচ হয়। দ্বিতীয়ত, খেতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। এতে ধানের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তৃতীয়ত, উৎপাদিত ধান থেকে ভালো মানের চাল পাওয়া যায় না। জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আমন মৌসুম। আমন ধানের চারা রোপণের সময়কাল মধ্য জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরু থেকেই খরা চলছে।
বৃষ্টিপাত কম হলেও আমন চাষে কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার প্রভাব যাতে আমনের ওপর না পড়ে, সে জন্য কৃষকেরা খেতে সেচ দিচ্ছেন।
যশোর বিমানবন্দরের আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ৩৬২ মিলিমিটার এবং আগস্ট মাসে ২৬৪ মিলিমিটার। যশোরে গত জুলাই মাসে ৮৮ মিলিমিটার এবং আগস্ট মাসে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় গত বছর জুলাই মাসে ৩৩৯ মিলিমিটার এবং আগস্ট মাসে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
কৃষকেরা বলছেন, সাধারণত বোরো আবাদে সেচ লাগে। ফলন বেশি হয়। আমন আবাদে সেচ দিতে হলে তাঁদের লোকসান গুনতে হয়। বোরোর তুলনায় আমনের ফলন অনেক কম হয়। এ বছর তাঁরা বেশি দাম দিয়ে সার কিনছেন। এর ওপর সেচও দিতে হচ্ছে। ডিজেলের দাম বেশি। আমন ধান করে এবার তাঁদের হাতে কিছুই থাকবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার জেলার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে। জেলায় রয়েছে ১ হাজার ৭০৯টি গভীর নলকূপ এবং ৭৪ হাজার ৬৫৬টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে ডিজেলচালিত ৬৩ হাজার ৮৬৭টি এবং বিদ্যুৎ চালিত ১০ হাজার ৭৮৯টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেলচালিত ৭০১টি এবং বিদ্যুৎ–চালিত ১৪৫টি পাওয়ার পাম্প রয়েছে।
১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জমির পানি শুকিয়ে গেছে। বেশির ভাগ এলাকায় জমি ফেটে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় ধানের চারা শুকিয়ে গেছে। খেত রক্ষায় কৃষকেরা সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।
গত শুক্রবার দুপুরে শুকিয়ে যাওয়া আমন খেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন কৃষক রামপ্রসাদ দাস। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের এই কৃষক বলেন, ‘এক বিঘা (৪৮ শতকে বিঘা) জমিতে এবার সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করেছি। অনেক দিন বৃষ্টি নেই। খেত ফেটে গেছে। আট কাঠা জমির ধানের চারা শুকিয়ে গেছে। খেতে পানি না থাকলে প্রচুর আগাছা জন্মায়। শুকনা খেতে আগাছায় ভরে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সেচ দিতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। তা ছাড়া বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলনও এবার কমে যাবে।’
বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক বিনয় বিশ্বাস এবার ১৬ বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) ৭ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে আমন ধানের চাষ করেছেন। তাঁর ১৪ বিঘা জমির ধানখেত শুকিয়ে গেছে। তিনি বলেন, মাত্র দুই বিঘা জমিতে পানি আছে। ওই জমিতে সেচ দেওয়া লাগছে না। বিঘায় ১ হাজার ২০০ টাকা চুক্তিতে পাঁচ বিঘা জমিতে সেচ দিচ্ছেন। ৯ বিঘা জমিতে খাল থেকে পানি তুলে সেচ দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন তাঁর ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত ডিজেল লাগছে। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের পেছনে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এবার সারের দামও বেশি। ঠিকমতো সারও পাচ্ছেন না। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার কিছুই থাকবে না।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, বৃষ্টিপাত কম হলেও আমন চাষে কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার প্রভাব যাতে আমনের ওপর না পড়ে, সে জন্য কৃষকেরা খেতে সেচ দিচ্ছেন। এতে তাঁদের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়ে যাবে।