দরপত্র ছাড়াই রাজশাহী নগরভবন সংস্কার, ঠিকাদার বিএনপির নেতা
অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী নগর ভবনের সংস্কারকাজ চলছে। তবে এ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ‘রিকুয়েস্ট ফর কোটেশন মেথডে’ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কাজ বিনা টেন্ডারে করা যায়। এ ছাড়া দরপত্র ছাড়া কাজ করার আরও অনেক পদ্ধতি আছে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কারকাজ করছে। এটা বিদেশি তহবিল বা সরকারি তহবিলের টাকা নয়। তারপরও ২০০৮ সালের পিপিআর মেনেই কাজ করছেন।
দরপত্র ও কোটেশন ছাড়াই সংস্কারকাজ হওয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চাই। জনগণের যেন কোনো সন্দেহ না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকা উচিত। আমরা আইনের ফাঁক দিয়ে অনেক কিছু করে ফেলি। তাই নিয়মের মধ্যেই সব হওয়া উচিত।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহীর নগর ভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, মেয়রের বাড়ি, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেয় জনতা। ওই দিন বিকেলে নগর ভবনে তাণ্ডব চালানো হয়; লুট করা হয় চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। ১০ তলা ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহীর নগর ভবনে আগুন দেয় জনতা। ১০ তলা ভবনটির নিচতলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। লুট করা হয় চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।
সিটি করপোশেন সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে নগর ভবন এবং এর বাইরের সিটি করপোরেশনের স্থাপনাগুলোতে ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন’শীর্ষক সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান। ওই প্রকল্পের ভেতর উপপ্রকল্প করে নগর ভবন সংস্কারকাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে জানিয়ে দিয়েছে, সংস্কার করতে হবে নিজস্ব অর্থেই। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর সম্প্রতি নগর ভবনের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা নগর ভবনে গ্লাস লাগানোর কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া মিলু এ কাজের ঠিকাদার। ভবনের তৃতীয় তলায় মেয়রের দপ্তরে নতুন টাইলস বসানো হচ্ছে। রেজাউল নামের একজন ঠিকদার এই কাজের সাব-কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন।
কী পদ্ধতিতে কাজ পেয়েছেন, জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া মিলু গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজনের জানাজায় আছেন, পরে কথা বলবেন। একটু পর ফোন দিয়ে তিনি বলেন, দরপত্রের মাধ্যমেই তিনি নগর ভবন সংস্কারের তিনটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছেন। প্যাকেজ তিনটির নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ফাইল না দেখে বলা যাবে না।’
দরপত্র আহ্বান না করে কাজ করার বিষয়টি জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘এটা প্রধান প্রকৌশলীকে জিজ্ঞেস করেন। কাজ করার অনেক পদ্ধতি আছে। এখন কোন পদ্ধতিতে কাজ চলছে, তিনি বলতে পারবেন।’
ঠিকাদার ইয়াহিয়া মিলু নগর ভবনের সংস্কারকাজ করছেন কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেননি সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে, তাতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।’ ঠিকাদারের নাম জানতে চাইলে তিনি একটু সময় নিয়ে ‘মিম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলেন। একটু পরই তিনি আবার বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের পর ইভল্যুয়েশন শেষে নামগুলো নিলে ভালো হয়।’