ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ে ৯৫০ গাড়ির নথি পাওয়া যাচ্ছে না

ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয় থেকে ২০১২ সালে ৯৫০টি গাড়ির মূল কাগজপত্র গায়েব করা হয়েছে। এতে গাড়ির মালিকেরা বিপাকে পড়ছেন।

ঝালকাঠি জেলার মানচিত্র

ঝালকাঠি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে প্রায় ৯৫০টি বিভিন্ন গাড়ির মূল কাগজপত্র উধাও হয়ে গেছে। ২০১২ সাল থেকে এসব গাড়ির কাগজপত্র বিআরটিএ দপ্তরে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফলে এসব গাড়ির মালিকেরা ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট নবায়ন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।

ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ের সূত্র জানায়, যেসব গাড়ির নথি উধাও হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল রয়েছে। মালিকপক্ষের অভিযোগ, ঝালকাঠি বিআরটিএ কার্যালয়ের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগসাজশে এসব গাড়ির ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট ফির নবায়নের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে বছরের পর বছর আত্মসাৎ করে মূল নথিসহ কাগজপত্র গায়েব করে দিয়েছেন।

স্থানীয় কয়েকজন গাড়ির মালিক বলেন, বিআরটিএ কার্যালয়ে দালাল চক্র ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর খপ্পরে পড়ে গ্রাহকেরা গাড়ির লাইসেন্সসহ ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট নবায়ন ফির টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ঝামেলা এড়াতে তাঁদের হাতে তুলে দেন। সেই সুযোগে এসব গাড়ির বিভিন্ন নবায়ন ফির টাকা আত্মসাৎ করে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। পরে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা এসব গাড়ির মূল কাগজপত্র গায়েব করে দিয়েছেন।

৯৫০টি গাড়ির নথি গায়েব হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঝালকাঠি বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে অফিস থেকে এ নথিগুলো গায়েব হয়ে গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ,বরিশাল সার্কেল অফিস বিভাগীয় তদন্ত করছে।’

দিবস তালুকদার নামের ঝালকাঠির এক সংবাদকর্মী ২০১৬ সালে মো. রাব্বি নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে (ঝালকাঠি ল-১১-০৩৮৭ নম্বর) একটি মোটরসাইকেল কেনেন। পরে তিনি এর মালিকানা পরিবর্তন করতে গিয়ে দেখেন অফিসে এর আসল নথি নেই। তাই তিনি অদ্যাবধি এ মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে দিবস তালুকদার বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও ঝালকাঠি বিআরটিএ অফিসে মোটরসাইকেলের মূল কাগজপত্র না থাকায় এর মালিকানা পরিবর্তন করতে পারছি না। এভাবে এতগুলো গাড়ির কাগজপত্র গায়েব হওয়া রহস্যজনক। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারণ, এসব গাড়ির মালিকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’

ঝালকাঠির ব্যবসায়ী সামসুল হকের একটি পিকআপ গাড়ির মূল কাগজপত্র বিআরটিএ কার্যালয়ে না থাকায় ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট নবায়ন করতে পারছেন না।

গাড়ির চালক বাদল হোসেন বলেন, এভাবে প্রায় এক হাজার গাড়ির আসল কাগজ উধাও হওয়ায় গাড়ির মালিকপক্ষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গাড়ি নিয়ে সড়কে নামলেই ট্রাফিক পুলিশ ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিট নবায়ন না থাকায় মামলা দিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।