সিলেটে অবৈধভাবে তোলা পাথর–বালু জব্দে বসেছে তল্লাশিচৌকি
সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে অবৈধভাবে দেদার বালু ও পাথর উত্তোলন চলছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে এসব দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন। এভাবে বালু ও পাথরের পাচার ঠেকানোর পাশাপাশি জব্দ করতে এবার তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) বসিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাধারণত পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা পাথর–বালু সিলেট বিভাগীয় শহর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তাই সিলেট শহরে ঢোকার আগে পৃথক দুটি স্থানে গত ২৮ মে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। সেই থেকে এ দুটি চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে যানবাহন থামিয়ে অবৈধভাবে আনা পাথর–বালু জব্দ করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত টানা ১১ ঘণ্টা এ চেকপোস্ট পরিচালিত হয়।
মূলত সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের নির্দেশনায় প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে। ২৮ মে থেকে গত রোববার পর্যন্ত দুটি চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে ৮৪টি অবৈধভাবে বালু ও পাথরবাহী ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে ঠিক কী পরিমাণ বালু ও পাথর জব্দ করা হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট–তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহপরান এলাকার নোয়াগাঁও রাস্তার মুখে ও সিলেট–ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরকাছ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাছে পৃথক দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ দুটি এলাকাই সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত। এসব চেকপোস্টে পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্বে থাকেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযানকারী দল অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহন বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারির অবস্থান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায়ও পাথর কোয়ারি রয়েছে। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর জেলার সব কটি পাথর কোয়ারিতে রীতিমতো লুটপাট শুরু হয়। এসব কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে হাজারো মানুষ পাথর ও বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরে সেসব পাথর–বালু দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, গণ–অভ্যুত্থানের পরপরই স্থানীয় প্রশাসন অনেকটা ‘অকার্যকর’ ছিল। এ সুযোগে প্রভাবশালী মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকেরা অবাধে পাথর ও বালু উত্তোলন শুরু করেন। ভারী যন্ত্রপাতির (এক্সকাভেটর) পাশাপাশি বেলচা, কোদাল ও টুকরি নিয়ে হাত দিয়েও এসব বালু–পাথর উত্তোলন চলে। পুরো জেলায় এরই মধ্যে প্রায় হাজার কোটি টাকার পাথর ও বালু লুট হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন। যদিও কত টাকা লুটপাট হয়েছে, এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্যই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের নির্দেশনা ও তৎপরতায় পাথর–বালুর লুটপাট বন্ধে জোরেশোরে প্রশাসনিক অভিযান শুরু হয়। এর মধ্যে শতাধিক পাথর উত্তোলনকারীকে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রচুরসংখ্যক নৌকা জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে।
সিলেট মহানগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খান শাহপরান এলাকায় পরিচালিত চেকপোস্টে এক দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর দায়িত্বপালনের সময় পরিচালিত অভিযানে ৪০০ ফুটের ছয়টি ট্রাক ও একটি ট্রাকের অর্ধেকভর্তি বালু জব্দ করা হয়েছে। এসব বালু বহনকারীদের কাছে বালু কেনার বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। এগুলো অবৈধ হওয়ায় জব্দ করা হয়।
যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, কোয়ারিতে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। কারাদণ্ড, জরিমানা, নৌকা ও পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত উপকরণ ধ্বংসসহ নানা ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এবার চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ পাথর–বালু বহনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর আরও কয়েকটি স্থানে এমন চেকপোস্ট বসানো হবে।