লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রে নালিশ

লক্ষ্মীপুর জেলার মানচিত্র

লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সংগঠনের কমিটি দেওয়ার কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে নালিশ করেছেন জেলা কমিটির কয়েকজন নেতা।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি–বাণিজ্যসহ ১১টি অনিয়মের অভিযোগ এনে গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন ওরফে খোকন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রোমানা ফৌরদাউস। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর ওই কমিটির সহসভাপতি রাশেদ নিজামও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

কমিটি–বাণিজ্য ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। একটি চক্র অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’

সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব ইমতিয়াজ বলেন, ‘টাকা দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, এটা যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, তবে সব দায় আমরা নেব। তা ছাড়া সব কটি কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশে করা হয়েছে। বাণিজ্যের অভিযোগ সঠিক নয়।’

সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, তিন বছরের জন্য জেলা কমিটি করা হয় ২০১৭ সালে। সে কমিটি এখন আট বছর মেয়াদ পার করছে। ১২১ সদস্যের এ কমিটির অধিকাংশ নেতার সঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যোগাযোগ নেই। দলীয় কার্যক্রমে ভাটা থাকলেও কমিটি–বাণিজ্যের বিষয়ে তাঁরা সক্রিয় আছেন।

লিখিত অভিযোগ কমিটি বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তদের কমিটিতে পদায়নের কথা বলা হয়। এতে বলা হয়েছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে হাশেম আহম্মদ ওরফে রুপমকে। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর থানায় ইয়াবার মামলা হয়। জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান ফয়সাল শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সদস্যসচিব শহিদ চৌকিয়ার কাছ থেকে কমিটি দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ। তিনি মাহবুবকে এ জন্য দুই লাখ টাকার একটি চেক দেন। পরে এক লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করে চেক ফেরত চান। কিন্তু মাহবুব চেক ফেরত না দিয়ে আরও এক লাখ টাকা দাবি করছে।

এ বিষয়ে শহিদ চৌকিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, মাহবুব ইমতিয়াজের সঙ্গে বিষয়টির সমঝোতা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি পরে কথা বলবেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আলম ওরফে বাবলুর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। টাকা না দিলে কমিটি ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দেন জেলার নেতারা। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নুরুল আলম প্রথম আলোকে, ‘পাঁচ লাখ টাকার জন্য লক্ষ্মীপুর শহরে বাগবাড়ি এলাকায় আমাকে খবর দিয়ে নিয়েছে। আমি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ক্ষুব্ধ হন। পরে তাঁরা আমাদের কমিটি ভেঙে দিয়ে বিভিন্ন মামলার আসামিদের দিয়ে কমিটি করেন।’

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি রাশেদ নিজাম বলেন, মাদকাসক্ত, দলের নেতা হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করে নেতা বানানো হয়েছে। ইউনিয়ন কমিটি দিতেও তাঁরা বাণিজ্য করে। এটি রাজনীতির জন্য চরম লজ্জাজনক। দলকে এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। এ জন্য বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, যাঁরা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন, তাঁরা বিতর্কিত। অনেকের বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করা, মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় কেন্দ্র জানানো হয়েছে।