সড়কের পাশের মরা গাছ না কাটায় দুর্ঘটনার শঙ্কা

সাতক্ষীরা জেলার ৯টি সড়কের দুই পাশে ২০৭৮টি গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। গাছগুলো অপসারণ না করায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার করছেন মানুষ।

সাতক্ষীরায় সড়কের পাশে মরে যাওয়া গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের পুষ্পকাটি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার ৯টি সড়কের দুই পাশের বড় বড় গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া কয়েক হাজার গাছ বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেই এসব গাছের ডাল ভেঙে পড়ে পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। অথচ এসব গাছ দীর্ঘদিনেও কেটে ফেলার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ২০ বছর আগে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার রেইনট্রিগাছ লাগায়। দুই বছর ধরে অধিকাংশ গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে আরও জানায়, সাতক্ষীরা-চাঁদপুর সড়কের দুই পাশে ৩০৭টি, কদমতলা-বৈকারি সড়কের দুই পাশে ২২৭টি, কুল্যা-রমনগর সড়কের দুই পাশে ২০০টি, পাটকেলঘাটা-দোলুয়া সড়কের দুই পাশে ১৪৭টি, ঝাউডাঙ্গা-বালিয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে ২৭টি, নজিমগঞ্জ-নূরনগর সড়কের দুই পাশে ৪৫০টি, শ্যামনগর-কাশিমাড়ি সড়কের দুই পাশে ২৫০, শ্যামনগর-নওয়াবেঁকি সড়কের দুই পাশে ২০০, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের দুই পাশের ২৭০টি গাছ মরে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জি এম মারুফ বিল্লাহ জানান, সড়কের পাশে রেইনট্রিগাছগুলো মরে যাচ্ছে। এ গাছ দ্রুত বাড়ে বলে একসময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে সড়কের পাশে এ গাছ লাগানো হয়েছিল। দুই বছর ধরে সাতক্ষীরা জেলায় রেইনট্রিগাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কয়েকজন গবেষক এসে মরা গাছের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালান। তাতে দেখা যায়, লাক্ষা পোকার আক্রমণে এসব গাছ মরে যাচ্ছে। লাক্ষা পোকার কারণে গাছ তার স্বাভাবিক খাদ্য সংগ্রহ করতে না পেরে আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরায় রেইনট্রিগাছ লাগানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক ও সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কে গত রোববার দেখা গেছে, এই দুই সড়কের দুই পাশে বড় বড় রেইনট্রিগাছ শুকিয়ে মরে রয়েছে। সকালে বৃষ্টি শুরু হলে দুটি সড়ক দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যারা চলাচল করছে ভয়ে ভয়ে।

সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন স্কুলশিক্ষক দুলু রায়। তিনি জানান, সামান্য ঝড় কিংবা বৃষ্টি হলে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। দুই বছর ধরে চলছে এমন অবস্থা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ সড়ক দিয়ে যারা চলাচল করে, তারা ভয়ে ভয়ে চলাচল করে।

একই সড়কের নলতা এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। ঝড়বৃষ্টি ছাড়াও সব সময় এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। দুই সপ্তাহ আগে তিনি কলেজে যাওয়ার সময় তাঁর সামনে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়ে এক সাইকেলচালক আহত হন।

সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের বাসিন্দা আবদুল হাই ও আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসান জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়কের কয়েক হাজার বড় বড় রেইনট্রিগাছ শুকিয়ে মরে গেছে। কিন্তু জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে বলা হলে এসব গাছ অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দুই বছর কাটিয়ে দিয়েছে। কবে এসব গাছ অপসারণ করবে, তার ঠিক নেই। গাছ ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি সড়কের পাশে রেইনট্রিগাছ মরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ইতিমধ্যে বন বিভাগকে দিয়ে জরিপ ও মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে মরা গাছগুলো অপসারণ করা হবে।