গার্ডার বানিয়ে ঠিকাদার উধাও 

দুই বছর ধরে কাঠের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। সেটির অবস্থাও এখন জরাজীর্ণ।

নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার নির্মাণের পর তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ। গত বুধবার কিশোরগঞ্জ সদরের রঘুখালীতেছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুখালী এলাকার নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ তিন বছর ধরে বন্ধ। সেতুর দুটি গার্ডার নির্মাণের পর থেকে লাপাত্তা ঠিকাদার। সেতু না থাকায় উপজেলা শহরে যেতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ পথ ঘুরে আসতে হচ্ছে। তাঁরা নদী পারাপারের জন্য সেতুর পাশে একটি কাঠের সাঁকো বানালেও সেটার অবস্থা জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিকল্প সড়ক ও সেতু না থাকায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বাড়লে কাঠের সেতুটিও ভেঙে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা দ্রুত সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করায় চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এক বছর আগে ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল চেয়ে ঢাকায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
মো. মোজাম্মেল হক, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী, এলজিইডি

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদরের রঘুখালী এলাকায় নরসুন্দা নদীতে সোয়া ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিবিএল সার্চের (জেবেকা)। তাদের থেকে সাব-ঠিকাদারি নিয়ে কাজটি শুরু করে ‘এস আলম’ নামের কিশোরগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ শুরু হওয়া কাজ ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দুই পাশে দুটি গার্ডার নির্মাণের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যায়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে এলজিইডি। দুই বছর ধরে সেতু ছাড়াই চলাচল করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মোটামুটি চলাচলের উপযুক্ত একটি সেতু ভেঙে তিন বছর আগে নতুন করে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু দুই পাশে দুটি গার্ডার নির্মাণের পর দুই বছর ধরে কাজের খবর নেই। সেতুর নির্মাণকাজ কবে হবে, তা কেউ জানেন না। নির্মাণকাজ আটকে থাকায় সহসাই তাঁদের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।

গত বুধবার সরেজমিন রঘুখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে নরসুন্দা নদীর পানি একেবারে কমে গেছে। অল্প পানিতে কচুরিপানার পাশাপাশি ঝোপ তৈরি হয়েছে। কচুরিপানার মধ্যে সেতুর দুটি গার্ডার বসানো হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ না করায় আশপাশে জঙ্গল তৈরি হয়েছে। গার্ডারের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কাঠের সাঁকো। কলেজশিক্ষার্থীসহ কয়েকজন নারী-পুরুষকে সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে দেখা গেল।

কলেজশিক্ষার্থী রিমা আক্তার ও সোহেল মিয়া বলেন, সদরের শোলাকিয়া, গাছবজার, রঘুখালী, রাজকুন্তি, পাঠানপাড়া, ছয়না, বৌলাইয়ের লক্ষাধিক মানুষ ওই সেতু ব্যবহার করেন। মোটামুটি চলনসই একটি সেতু ভেঙে নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ। সেতু না থাকায় তাঁদের প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। বর্ষাকাল চলে আসছে। এখনো বাকি কাজের খবর নেই। দ্রুত কাজ শেষ না হলে দুর্ভোগ শেষ হবে না।

সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এস আলম দুই বছর ধরে লাপাত্তা। এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়বস্তু জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়েও নম্বর বন্ধ থাকায় সাড়া মেলেনি।

এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, সেতুটির নিচের পাইলিংসহ দুই পাশের দুটি গার্ডার নির্মাণ করা হয়েছে। ওপরের স্ল্যাবের কাজ বাকি রেখে প্রায় দুই বছর ধরে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক বছর আগে তাদের চুক্তিপত্র বাতিল চেয়ে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে বাকি কাজের ব্যয় হিসাব করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।