কুকুরের তাড়া খেয়ে ভ্যানচালককে কার্যালয়ে ডেকে পেটানোর অভিযোগ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিযোগকারী ভ্যানচালক আফজাল খাঁ। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে কুকুরের তাড়া খেয়ে মালিক হিসেবে এক ভ্যানচালককে পুলিশ দিয়ে কার্যালয়ে ডেকে এনে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজবাড়ী আদালত ভবনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালকের নাম মো. আফজাল খাঁ (৩০)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিযুক্ত মো. সুমন হোসেন রাজবাড়ীর ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে করে তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি কুকুর ধাওয়া করে অনেক দূর নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় কয়েকজনের চেষ্টায় রক্ষা পান। পরে কুকুরের মালিক হিসেবে আফজাল খাঁকে কার্যালয়ে ডেকে এনে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চান। তখন আফজাল জানান, পাঁচ মাস আগে তাঁর কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁকে সতর্ক করা হয়, কিন্তু কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কার্যালয় থেকে সুস্থ অবস্থায় বের হলেও পরবর্তী সময়ে কী হলো, বিষয়টি তাঁর বোধগম্য নয়। কার্যালয় থেকে যাওয়ার পর কারও ইন্ধনে তিনি এমন অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভ্যানচালক আফজাল খাঁ আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের শ্বশুরবাড়ি তাঁদের এলাকায়। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) তিনি শ্বশুরবাড়ি এলাকায় গেলে স্থানীয় একটি কুকুর ধাওয়া করে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং কুকুরটির মালিকের সন্ধান করতে বলেন। স্থানীয় কেউ তাঁকে জানান, কুকুরটির মালিক আফজাল। তিনি বলেন, ‘আমি একজন ভ্যানচালক, শ্রমিকের কাজ করি। আমার মতো মানুষ কীভাবে কুকুর পুষবে? এলাকার দোকানের সামনে কুকুর দেখলে পাউরুটি, বিস্কুট কিনে দিই।’

আফজাল খাঁ বলেন, এরপর রাজবাড়ী সদর থানার এক উপপরিদর্শকের (এসআই) মাধ্যমে ওই ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। গতকাল দুপুরের দিকে তিনি তাঁর ভাইকে নিয়ে থানায় ওই এসআইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। পরে ওই এসআই ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে ফোনে কথা বললে তাঁদের বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল চারটার দিকে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন।

আফজাল খাঁর অভিযোগ, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সঙ্গে থাকা সবাইকে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এ সময় তিনি কুকুর নিয়ে গালাগাল করে চেয়ারের সঙ্গে দুই হাত সামনের দিকে রশি দিয়ে বেঁধে কাঠের রোলার (লাঠি) নিয়ে পশ্চাৎদেশে তিন থেকে চারটি আঘাত করেন। কিছুক্ষণ থেমে আবার কয়েকটি আঘাত করেন। এভাবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থেমে থেমে ২৫ থেকে ৩০টি আঘাত করেন। নির্যাতনের বিষয়ে যেন কাউকে কিছু না বলি শাসিয়ে লোক ডেকে কক্ষ থেকে বের করে দেন।

আফজাল খাঁ বলেন, ‘আমি ব্যথায় হাঁটতে পারছিলাম না। এ সময় দূর থেকে আমার মেজ ভাইসহ অন্যরা এগিয়ে এলে তাঁদের কাঁধে হাত রেখে কষ্ট করে সদর থানায় যাই। পুলিশ আমাকে চিকিৎসা নিতে বললে সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। এরপর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি।’

আফজাল খাঁর বড় ভাই সাহেব আলী বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট সুমনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আমাদের সবাইকে তাঁর রুম থেকে বের করে আমার ভাইকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। কী অপরাধ ছিল আমার ভাইয়ের। আমরা এই নির্যাতনের বিচার চাই।’

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আফজাল খাঁ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এলে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তাঁর পশ্চাৎদেশে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে যে সুস্থ হতে অন্তত দুই মাস লাগবে।

পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন বলেন, আফজাল খাঁর লিখিত অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন এবং সিদ্ধান্ত দিলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।