দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা উত্তর বলে দিচ্ছেন, খাতায় লিখছে অন্যজন

বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের উত্তর মৃদু কণ্ঠে নাবিলা বলে দিচ্ছেন, আর তা শুনে খাতায় লিখছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম (১৮)। তিনি এবার লালমনিরহাট শহরের চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। শ্রুতলিখন পদ্ধতিতে লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১১২ নম্বর কক্ষে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁর হয়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাবিলার খাতায় লিখে দিচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের উত্তর মৃদু কণ্ঠে নাবিলা বলে দিচ্ছেন, আর তা শুনে খাতায় লিখছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রহিমা খাতুন। নাবিলা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তাঁকে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হয়েছে। উত্তরপত্র রিভিশন করে পাঁচ মিনিট আগেই নাবিলা পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকের কাছে খাতা জমা দেন।

শ্রুতলিখনের কাজ করতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত রহিমা খাতুন। সে লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রহিমা বলে, ‘নাবিলা আপু উত্তর বলে দেন, আমি খাতায় লিখি। আপু এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমিও খুশি হব। আমার ভালো লাগছে, একজন মেধাবী ছাত্রীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সহায়তা করতে পারছি।’

খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আরডিআরএস বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত লালমনিরহাট সদরের হাঁড়িভাঙ্গায় অবস্থিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকেন্দ্রে থেকে পড়াশোন করছেন। পুনর্বাসনকেন্দ্রের কাউন্সিলর নুরবানু আক্তার বলেন, শুধু পড়াশোনায় নয়, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চায় নাবিলা সুনাম অর্জন করেছেন।

খন্দকার নাবিলা তাবাসসুম বলেন, ‘পাঁচ বছর বয়সে আমি পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলি। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসা করার পরও কোনো ফল হয়নি। এর পর থেকে আমি আরডিআরএসের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পুনর্বাসনকেন্দ্রে রয়েছি। আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে আমার মায়ের মতো শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চাই। পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতচর্চাটাও চালিয়ে যেতে চাই।’

লালমনিরহাট চার্চ অব গড উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদার রহমান ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক পার্থ সারথি আচার্য জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিলা পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। এসএসসিতে তিনি ভালো ফল করবেন বলে তাঁরা আশাবাদী।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এসএসসি পরীক্ষার্থী খন্দকার নাবিলা তাবাসসুমের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব ও প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আইয়ুব আলী।

নাবিলার স্কুলশিক্ষক মা খন্দকার ফারজানা আফরিন বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এত দূর এসেছে, সামনে আরও এগিয়ে যেতে চায়। আমার মতো শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়। আমি তার জন্য গর্বিত। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন, যেন সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’