গ্রাম আদালত বসিয়ে ৫ কিশোরকে ‘চুরি’র শাস্তি দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

নওগাঁ জেলার মানচিত্র

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আখ চুরির অভিযোগে পাঁচ কিশোরকে গ্রাম আদালতে বিচারের নামে জনসমক্ষে চড়থাপ্পড় ও কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাদের অভিভাবকদের ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানাও করা হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গ্রাম আদালত বসিয়ে এ বিচারকাজ করেন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। এ সময় ওই ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হারুন অর রশীদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সংশোধন করতে ওই কিশোরদের বিচার করা হয়েছে। তারা যাতে ভয় পায়, এ জন্য জরিমানাও করা হয়। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।’

আইন অনুযায়ী কিশোরদের গ্রাম আদালতে তোলা ও জনসমক্ষে চড়থাপ্পড় মারা যায় কি না, জানতে চাইলে নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী মহসীন রেজা বলেন, গ্রাম আদালতে কিশোরদের বিচার করার এখতিয়ার রাখেন না চেয়ারম্যানরা। বিষয়টি ছোট। কিশোরদের জনসমক্ষে না নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় ঘরে বসে এটি নিষ্পত্তি করে দিতে পারতেন ইউপি চেয়ারম্যান। পাঁচ কিশোরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো মোটেও উচিত হয়নি।

স্থানীয় লোকজনের একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গ্রামের একটি খেত থেকে ওই পাঁচ কিশোর আখ চুরি করে বলে অভিযোগ করেন ওই খেতের মালিক। খবর পেয়ে ভালাইন ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা রাতে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি পাঁচ কিশোরের অভিভাবকদের আজ গ্রাম আদালতে হাজির করতে বলেন।

গ্রামের বাসিন্দা শাহিন আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রাম আদালত বসিয়ে পাঁচ কিশোরের বিচার করেন ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। বিচারে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বিচারের অংশ হিসেবে উপস্থিত লোকজনের সামনে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের চড়থাপ্পড় মারেন। এ সময় পাঁচ কিশোরকে কান ধরে ওঠবসও করানো হয়।

আখ চুরির খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয় বলে জানান মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযুক্ত সবাই কিশোর হওয়ায় তখন স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বাক্কার সিদ্দিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাম আদালতে কিশোরদের বিচার করে থাকলে চেয়ারম্যান একটু বাড়াবাড়িই করেছেন।