বরিশালে বই শেলফে তুলে না রেখে বিনিময়ের আয়োজন

বরিশালে শুক্রবার দিনভর আয়োজন করা হয় বই উৎসব। সেখানে বই বিনিময় করেন তরুণ-তরুণীরা। নগরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে প্রথমবারের মতো বই বিনিময় উৎসব করেছেন একদল তরুণ-তরুণী। বই বন্ধু নামের একটি সংগঠন শুক্রবার দিনভর এ উৎসবের আয়োজন করে। ‌এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যম বই। তাই শেলফে নয়, বই বিনিময় করে নিজে ও অন্যকে সমৃদ্ধ করতে পারি।’

নগরের বান্দ রোডের শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই উৎসবের উদ্বোধন হয় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই।

উৎসবে বই বিনিময় করতে আসা বেশ কয়েকজন তরুণ জানান, ‘বই পোকা’ নামে  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি পেজ থেকে বই বিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁরা জানতে পারেন, শুক্রবার বরিশালে বই বিনিময় উৎসব হচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধুদের মাধ্যমেও এই বই উৎসবের খবর পেয়ে তাঁরা অনুষ্ঠানে এসেছেন। তাই পড়ে ফেলা বই ঘরে শেলফে না রেখে নতুন কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে বই বিনিময় করতে এসেছেন তাঁরা। কেবল গল্প, উপন্যাস বা কবিতার বই নয়; শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়ক হবে, এমন বইও খুঁজতে এসেছেন কেউ কেউ।

আয়োজকেরা জানান, কেউ যেন সহজেই এবং পছন্দের বই বিনিময় করতে পারেন, সে জন্য আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা ভিন্ন ভিন্ন টেবিলে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি করে বই সাজিয়েছেন। তাঁরা পাঠক বিনিময় করে নতুন বইয়ের স্বাদ পাইয়ে দিতে কাজ করছেন।

বই বিনিময় করতে এসেছেন বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম, তনুশ্রী রায়সহ অনেকে। নাইমুল বললেন, ‘এই আয়োজন ব্যতিক্রমী। আমরা বই কিনে পড়ার পর সেটি ঘরের শেলফেই পড়ে থাকে। আর পড়া হয় না। আবার অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছা করলেই নতুন নতুন পছন্দের বই কিনতে পারেন না। সে জন্য বই উৎসবে বই বিনিময় করতে পারার সুযোগটি আমাদের  কাছে নতুন কিছু জানার সুযোগ অবারিত করেছে। আমরা চাই, এই উৎসব প্রতিবছর একাধিকবার হোক।’

আয়োজকেরা জানান, বই বন্ধু নামের সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালে। সংগঠনের যাত্রা শুরুর পর রাজধানী ঢাকায় দুইবার ও চট্টগ্রামে তিনবার এবং বরিশালে এই প্রথমবার বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করে। উৎসব চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

সংগঠনের টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই, মানুষ সময়ের মূল্য দিন। ভালো কাজে, ইতিবাচক চিন্তায় গড়ে উঠুক মানবসত্তা। এ জন্য বইয়ের বাইরে ভালো কোনো বিকল্প  মাধ্যম মানুষের কাছে নেই। তাই প্রতিবছর বই বিনিময় উৎসব করার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। যাতে মানুষ বই পড়তে আরও বেশি উৎসাহী হন। আমরা এই উৎসবের ধারাবাহিকতা রক্ষার চিন্তাভাবনা করছি।’

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই বলেন, কেবল বই মানুষের মনে দীর্ঘদিন ছাপ রেখে যেতে পারে। এ জন্য এমন উৎসব কেবল বরিশালে নয়, অন্যত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তরুণ প্রজন্ম আবার বই পড়ায় ফিরে আসে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি এবং মননশীলতার বিকাশে সবাইকে বইয়ের কাছেই  ফিরতে হবে। এ জন্য তরুণদের বই উৎসব এবং বই বিনিময়ের আয়োজনটি খুবই ব্যতিক্রমী আয়োজন।