বিক্রি বেড়েছে ধানের শীষ ব্যাজের, খুশি রোকন-সোহাগরা

খুলনার সমাবেশস্থলে ব্যাজ বিক্রি করছেন রোকন শেখ
ছবি: প্রথম আলো

পথের নানা বাধা পেরিয়ে আর যানবাহনের সংকটকে পাশ কাটিয়ে খুলনায় বিএনপির সমাবেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন। স্লোগান আর মিছিলে উৎসবমুখর সমাবেশস্থল। সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের কাছে ধানের শীষের ধাতব ব্যাজসহ নানা ধরনের ব্যাজ আর ব্যান্ড বিক্রি করছেন কয়েক বিক্রেতা। নেতা-কর্মীদের কাছে এর চাহিদাও ব্যাপক। বেচাবিক্রিতে খুশি বিক্রেতারাও।

এমন একজন বিক্রেতা মো. রোকন শেখ। সমাবেশের আগের সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে খুলনা এসেছেন তিনি। রাতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হাজার পাঁচেক টাকার ব্যাজ বিক্রি হয়ে গেছে তাঁর। সকালেও সমানতালে বিক্রি হচ্ছে।

আজ শনিবার সকালে রোকনের সঙ্গে সমাবেশস্থলে আলাপ হয়। জানা গেল, রোকনের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা থানায়। ৪২ বছরের জীবনে ১৮ বছর ধরে এসব বিক্রি করছেন তিনি। এখন থাকেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়। ঢাকার ওই এলাকা থেকে কিনে তিনি বিভিন্ন সমাবেশ, খেলার মাঠ আর বড় জমায়েতে পতাকা, ব্যাজ, ব্যান্ড এসব বিক্রি করেন। এই পেশায় আসার আগে করতেন সবজির ব্যবসা।

রোকন বলেন, ‘গতকাল খুলনা এসেছি। পরিবহন ধর্মঘট থাকায় ঢাকা থেকে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন পরিবহনে আসা লেগেছে। রাতেই ছয় থেকে সাত হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। বেচাকেনা ভালো বলা চলে। সারা দিনে আরও অন্তত ১০ হাজার টাকার বিক্রির টার্গেট।’ কথা বলার ফাঁকে বেশ কয়েক বিএনপির কর্মী তাঁর কাছ থেকে ব্যাজপিন কেনেন। সেগুলো তাঁদের পোশাকের সঙ্গে আটকে দেন রোকন। অনেককে আবার দরদাম করে ফিরে যেতে দেখা গেল।

রোকন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানে সমাবেশ হয়, চলে যাই। সব সময় খোঁজখবর রাখি। খেলার মাঠসহ সব বড় প্রোগ্রামে এগুলো বিক্রি করি। অনুষ্ঠান বুঝে ব্যাজের আইটেম বদলায়। খুলনার সমাবেশে মানুষ ভালোই কিনছেন। তবে রাতে আমার মতো অনেকেই এগুলো বিক্রি করতে খুলনা চলে আসায় বেচাকেনা খানিকটা ভাগ হয়ে যাচ্ছে।’

রোকন যাঁদের কথা বলছিলেন, তাঁদের একজন মো. সোহাগ। ঢাকার শ্যামপুর থেকে খুলনার সমাবেশে এসেছেন এগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে। সোহাগ অবশ্য পরিবহন ধর্মঘটের ঝক্কি এড়াতে গত বুধবার রাতেই খুলনা এসেছেন। উঠেছেন স্থানীয় একটি হোটেলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেচাবিক্রি ভালোই চলছে। আগের দিন এলেও গতকাল সারা দিন খুব বেশি লোকজন ছিল না। তাই গতকাল বিক্রি বেশি হয়নি। রাত থেকে বিক্রি ভালো হয়েছে। রাতে ঘণ্টা দুই বিক্রি করে আজ শনিবার ভোর থেকে আবার সমাবেশস্থলে এসেছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত এই সমাবেশ আমাদের জন্য কতটুকু লাভজনক হয়।’

ব্যাজ কিনে বুকে লাগাতে লাগাতে যশোর থেকে আসা বিএনপির একজন কর্মী জাকির হোসেন বলেন, ‘বিএনপির ছোট-বড় সব সমাবেশে সুযোগ পেলে অংশ নিই। তবে এবারের সমাবেশে মানুষের অনেক আগ্রহ। বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ায় আগ্রহটা বেড়েছে। এখানে আসার পর থেকেই দেখছি উৎসবমুখর পরিবেশ। আমরা অনেকে ব্যাজও কিনে ফেললাম।’

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনায় এ সমাবেশ হচ্ছে। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেবেন। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে খুলনায় দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। আজ শনিবার সকালেও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা নানা বাধার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।