সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় ২৬ বছর ধরে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মৃত্যবার্ষিকী পালন করে আসছেন ভক্ত মাহবুব হাসান ওরফে হীরা শাহ (৩৯)। সালমান শাহর এই ভক্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধর্মপাশা মড়লপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। প্রিয় নায়কের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতিবছর নিজ গ্রামের মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন হীরা শাহ।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ধর্মপাশা মড়লপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়ির বারান্দায় হীরা শাহ একটি টেবিলের ওপর নায়ক সালমান শাহর বাঁধাই করা ছবি রেখেছেন। ফুল দিয়ে টেবিলটি সাজানো হয়েছে। টেবিলের এক পাশে রয়েছে ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর একটি ব্যানার। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ সেখানে এসে সালমান–ভক্ত হীরা শাহর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। সমব্যথী হয়ে দেখতে আসা মানুষজনকে সাধ্যমতো তিনি আপ্যায়ন করছেন। এ সময় প্রয়াত নায়কের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে হীরা শাহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে দোয়া করছেন।
১৯৯৩ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় হীরা শাহ ভিসিডিতে (ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার) ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছায়াছবি দেখে নায়ক সালমান শাহর ভক্ত হয়ে যান। এর পর থেকে সালমানের হাঁটাচলা, কথা বলার স্টাইল—সবকিছুই তিনি অনুসরণ করতে শুরু করেন। তবে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর তাঁর মনটা ভেঙে যায়। এর পর থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে সালমান শাহকে স্মরণ করে ও ভালোবেসে তিনি মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন।
হীরা শাহ বলেন, ‘প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর অভিনীত ২৭টি ছবিই আমি দেখেছি। তাঁর প্রথম ছবি দেখেই নিজেকে নায়ক হিসেবে দেখার স্বপ্ন শুরু হয়। ১১ বছর ধরে আমি নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করছি। ৩০টি নাটক ও ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তবে নায়ক হিসেবে অভিনয় করার সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। বেশির ভাগ নাটক ও সিনেমাতে খলনায়ক হিসেবে আমি অভিনয় করেছি। তবে নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন এখনো থেমে যায়নি।’
হীরা শাহর ছোট ভাই শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমার বড় ভাই নায়ক সালমান শাহর একনিষ্ঠ ভক্ত। প্রতিবছর ৬ সেপ্টেম্বর এলে সালমান শাহর মৃত্যবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আমরা পারিবারিকভাবে সাধ্যমতো তাঁকে সহযোগিতা করি। সালমাহ শাহর নামের সঙ্গে মিল রেখে করে এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ আমার বড় ভাইকে ভালোবেসে হীরা শাহ বলে ডাকেন। এতে আমাদের ভালোই লাগে। প্রয়াত নায়কের আত্মার মাগফিরাত কামনায় প্রতিবছর আমরা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আসছি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।’
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা ওরফে হিমু বলেন, ‘হীরা শাহ আমাদের এলাকার সন্তান। ছোট-বড় সবাই তাঁকে সালমান শাহর ভক্ত হিসেবেই চেনে। দীর্ঘদিন ধরে হীরা পারিবারিকভাবে সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছেন। হীরার স্বপ্ন, তিনি একদিন নায়ক হবেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক ও সিনেমায়ও হীরা অভিনয় করেছেন। তাঁর নায়ক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হোক, এই প্রত্যাশা করছি।’