কিশোরগঞ্জে গুনে গুনে ঘুষ নেওয়া ভূমি কার্যালয়ের সেই সহকারীকে সাময়িক বরখাস্ত

দপ্তরে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষের ৫ হাজার টাকা গুনে নিচ্ছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী আবদুল কাদির মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী আবদুল কাদির মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, দপ্তরে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে আবদুল কাদিরকে গতকাল রোববার বিকেলে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘুষের টাকা গুনে নেওয়ার সেই ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী আবদুল কাদির মিয়া দপ্তরে বসে ঘুষ নিচ্ছেন এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওই কর্মচারীকে উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দেওয়া হয়েছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়ে চিঠির কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি আবদুল কাদির। তাই তাঁর বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আবদুল কাদিরের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া যায়। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায় যে সেবাগ্রহীতা বলছেন, ‘সব খারিজ তো সমান না। গরিব মানুষ, কাজটা করে দিয়ে দেন।’ উত্তরে আবদুল কাদির বলেন, ‘কথা ছিল ছয় হাজার টাকা দিবেন। কম দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে পরে হলেও দিতে হবে। একটা কাজ করে কিছু টাকা পাওয়া না গেলে চলে?’ এরপর টাকাগুলো গুনে পকেটে ভরেন আবদুল কাদির। চলে যাওয়ার সময় সেবাগ্রহীতা আবারও বলেন, ‘আপনি আরও এক হাজার টাকার আবদার করেছেন, একটা বিহিত (ব্যবস্থা) হবে। আপনি কাজটা করে রাখেন।’

স্থানীয় লোকজন ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী আবদুল কাদির মিয়াসহ অন্য কর্মকর্তারা। ভূমি কার্যালয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাজ তো দূরের কথা সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন না তাঁরা।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্থানীয় লোকজন। নুরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘যে জায়গা খারিজ করতে ৩ হাজার টাকা লাগে, সেখানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। শুধু তা-ই নয়, টাকা নিয়েও কাজ করতে গিয়ে হয়রানি করে। মাসের পর মাস ঘুরতে হয়।’

এ নিয়ে গত ২৯ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে প্রতিবেদন ও ভিডিও প্রকাশ করা হয় এবং ৩০ মার্চ প্রথম আলো ছাপা পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।