আট বছরের শিশুকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে আসামি, লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ

আদালত প্রাঙ্গণে অভিভাবকের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু ও তার ফুফাতো ভাই। মঙ্গলবার হবিগঞ্জের আদালতে
ছবি: প্রথম আলো

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রফিক (ছদ্মনাম)। মারামারির অভিযোগে তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে থানায় মামলা করেছেন গ্রামের এক বাসিন্দা। ফলে পাঁচ মাস ধরে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে তাকে। এ নিয়ে খুনসুটি করে সহপাঠীরা। এমন অবস্থায় লজ্জায় স্কুলে যেতে পারছে না রফিক।

শিশুটির বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামে। তার ১১ বছর বয়সী এক ফুফাতো ভাইকেও ২৮ বছর বয়স দেখিয়ে মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪ নারীসহ এ মামলার আসামি ১৮ জন। শিশুদের বয়স বাড়িয়ে মামলা ও হয়রানির অভিযোগে মঙ্গলবার হবিগঞ্জের আদালতে একটি আবেদন দিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী।

হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এ আবেদনের ওপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। পাশাপাশি ওই দিন মামলার বাদী ও তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফজলে আলী। তিনি প্রথম আলোকে আরও বলেন, হয়রানি করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও শিশুদের বয়স বাড়িয়ে এ মামলা করা হয়। আদালত নিজে যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন শিশুদের আসামি করার বিষয়টি। পাশাপাশি এ মামলায় হয়রানি করার জন্য চার নারীকেও আসামি করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার বাদী অমল ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বক্তব্য মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি।

আদালতে দেওয়া অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী অমল ভৌমিক গত বছরের ৪ আগস্ট থানায় মামলা করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, তিনি বাকিতে মাছ না দেওয়ায় একই গ্রামের ৪ নারীসহ ১৮ জন তাঁকে মারধর করেন। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয় শিশু রফিককে (৮)। সে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয় তার ফুফাতো ভাইকে (১১)। সে গ্রামে থাকে না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার শাহবাগ এলাকায় একটি ফুলের দোকানে কাজ করে। তারা গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে জামিন পেলেও মাসে মাসে আদালতে এসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। শিশুদের এ ভোগান্তি দেখে তাদের আইনজীবী ফজলে আলী আবেদনটি করেন।

আদালত প্রাঙ্গণে শিশুটি প্রথম আলোকে বলে, মামলায় আসামি করায় এবং পুলিশ তার বাড়িতে যাওয়ায় সহপাঠীরা খুনসুটি করে। যে কারণে সে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি মাসে সে মামার সঙ্গে আদালতে আসা-যাওয়া করলেও কী কারণে আসে, সেটা সে জানে না।

শিশুটির ফুফাতো ভাই বলে, এ মামলার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। তার বাবা জামিনের আগে তাকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে এখনো ঢাকায় থাকে। সেখান থেকেই প্রতি মাসে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

আদালতে শিশুদের সঙ্গে আসা অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানি করার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে এই সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাঁরা এ থেকে মুক্তি চান।