চিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়

নওগাঁ শহরে গতকাল প্রথম আলো বন্ধুসভা আয়োজিত যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

যক্ষ্মা সম্পর্কে সমাজে এখনো অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সঠিক চিকিৎসায় যক্ষ্মা পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। বন্ধুসভার বন্ধুরা এসব ভুল ধারণা কিংবা কুসংস্কার দূর করতে সহযোগিতা করবে। গতকাল শনিবার নওগাঁ শহরে যক্ষ্মাবিষয়ক কর্মশালায় আমন্ত্রিত অতিথিরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সচেতনতা বাড়াতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে নওগাঁ প্রথম আলো বন্ধুসভা। আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় প্রথম আলোর যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মসূচির আওতায় রাজশাহী বিভাগের আটটি ও রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে গত জুনে ঢাকায় তিন দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্য দিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়।

মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরুর প্রথম ধাপে গতকাল নওগাঁ শহরের উকিলপাড়া এলাকায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) সেমিনার কক্ষে দিনব্যাপী কর্মশালা সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়। বন্ধুসভার জন সদস্য কর্মশালায় অংশ নেন। প্রথম আলো বন্ধুসভা নওগাঁর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের এই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান আনছারী ও দপ্তর সম্পাদক অছিম উদ্দীনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা জয়িতা সাহা, আইসিডিডিআরবি পরিচালিত ইউএসএআইডিস অ্যালাইয়েন্স ফর কমব্যাটিংটিবি (এসিটিবি) ইন বাংলাদেশ কার্যক্রমের প্রকল্প গবেষক আবদুল্লা আল ফারাবী, এসিটিবি প্রকল্পের প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, নওগাঁয় প্রথম আলোর প্রতিনিধি ওমর ফারুক প্রমুখ। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।

উদ্বোধন পর্বে বক্তারা বলেন, যক্ষ্মা একটি পুরোনো জীবাণুঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। বায়ুবাহিত রোগ ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় ওই রোগীর মাধ্যমে তাঁর স্বজন ও সমাজের আরও অনেক আক্রান্ত হতে পারে। এতে সংক্রামক ব্যাধি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে আইসিডিডিআরবির প্রশিক্ষক আবদুল্লা আল ফারাবী ও জাকির হোসেন যক্ষ্মা কী, কেন হয়, লক্ষ্মণ কী, রোগের ভয়াবহতা ও বিস্তার, যক্ষ্মা প্রতিরোধে করণীয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচটি গ্রুপ ভাগ করে কর্মশালায় অর্জিত জ্ঞানের ওপর গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করা হয়।

কর্মশালায় অংশ নিয়ে বন্ধুসভার বন্ধু মাসুদ রানা বলেন, ‘আগে জানতাম কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠাকে যক্ষ্মা বলে। এটাকে ফুসফুসের রোগ বলেই জানতাম। কিন্তু এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে জানতে পারতাম যক্ষ্মা ফুসফুসজনিত রোগ নয়। ফুসফুস ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অঙ্গও যক্ষ্মার কারণে আক্রান্ত হতে পারে। আর জানলাম, সঠিক চিকিৎসায় যক্ষ্মা পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।’

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা সার্ভেল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা জয়িতা সাহা বলেন, ‘যক্ষ্মা একটি জীবাণুঘটিত সংক্রামক ব্যাধি। একটি উদাহরণ তুলে ধরলেই এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে, করোনা নিয়ে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। এখনো এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ রয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা গেছে। অথচ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ এই রোগ সম্পর্কে এখনো সমাজে তেমন সচেতনতা তৈরি হয়নি। এখনো মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে কিছু কিছু ভুল ধারণা রয়ে গেছে। আজকের এই কর্মশালায় বন্ধুসভার বন্ধুরা যে জ্ঞান অর্জন করল, আশা করব, তাঁরা এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে যক্ষ্মা নিয়ে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করতে সহযোগিতা করবে।’