অবৈধ ইটভাটা আবার চালু

উপজেলার লস্করপুর গ্রামে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে এই ইটভাটা চালু করা হয়েছে। এখানে কৃষিজমির মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে স্থাপিত ইটভাটায় বালানি কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছেছবি: প্রথম আলো

আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমিতে আইন করে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষিদ্ধ হলেও এখানে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স কিছুই নেই।

পরতে পরতে আইন লঙ্ঘন করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে চলছে এই অবৈধ ইটভাটা। লস্করপুর গ্রামে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি বাজারসংলগ্ন কৃষিজমিতে এটি  স্থাপন করা হয়েছে।

এই ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া এই ধোঁয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এটি বন্ধের জন্য চলতি মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা  ইউনিয়নের উত্তর লস্করপুর গ্রামে স্থানীয় সফিকুর রহমান ইটভাটা চালু করেন।

এই ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকায় এলাকাবাসী এটি বন্ধে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে প্রশাসন ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। ইটভাটাটির নাম ছিল মেসার্স সফিক এন্টারপ্রাইজ। ভাটাটি গত নভেম্বরে চালু হয়েছে অন্য নামে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের উত্তর লস্করপুর গ্রামে কৃষিজমিতে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ভাটার তিন পাশে কৃষিজমি ও এক পাশে একটি ঘের। ইটভাটার ৪০০–৫০০ মিটার দূরে মালিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়াকোঠা ইউনিয়ন মাধ্যমিক ইনস্টিটিউশন ও বড়াকোঠা ইউনিয়ন ডিগ্রি কলেজ। দুই পাশে রয়েছে ডাবেরকুল বাজার ও চৌধুরীর হাট। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশদূষণসহ ধুলাবালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে পথচারীদের।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ২০১৯ সালে মেসার্স সফিক এন্টারপ্রাইজ নামের ওই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এ বছর পুরোনো সেই ইটভাটার মালিক সফিকুর রহমান স্থানীয় রিপন হাওলাদার ও রুবেল খলিফার কাছে ইটভাটার জমি ইজারা দেন। রিপন হাওলাদার ও রুবেল খলিফা শুধু নাম পরিবর্তন করে মেসার্স আবির ব্রিকস নামে পুরোনো ইটভাটাটি চালু করেন।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ওই আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। একই আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স না নিয়ে কোনো ইটভাটায় ইট তৈরি করা যাবে না। এই আইনের এসব ধারা লঙ্ঘন করে মেসার্স আবির ব্রিকস নামের ইটভাটাটি চালু করা হয়েছে।

চৌধুরীর হাটের ব্যবসায়ী খবির হোসেন ও ডাবেরকুল বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্ষমতার জোরে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে শুধু ইটভাটাই চালু করেননি তাঁরা, অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি তুলে ও সন্ধ্যা নদীর তীরের চর কেটে ইট তৈরি করে থাকেন এবং জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ান, যা বেআইনি। ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষিজমি ও বন উজাড় হয়ে যাবে।

উমালিকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফৌজিয়া সুলতানা বলেন, আইন না মেনে বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। চার বছর আগে এ ইটভাটা প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও নতুন নামে এ বছর আবার সেই ইটভাটা চালু করা হয়েছে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অবৈধভাবে ইটভাটা চালুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স আবির ব্রিকসের অংশীদার রুবেল হাওলাদার বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এখানে ইটভাটা চালু ছিল। তাই আমরা পুরোনো মালিকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে পুনরায় চালু করেছি।’ তিনি লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা চালুর কথাও স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উজিরপুরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম ইমাম বলেন, ‘লস্করপুর গ্রামে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’