সড়কবাতিগুলো এখন নিবু নিবু

সৌরবিদ্যুতের ৩৭৮টি সড়কবাতি স্থাপনে ব্যয় হয় ২ কোটি ১১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে বেশির ভাগ বাতি।

অকেজো হয়ে পড়া সড়কবাতি। গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের শিমুলতলী এলাকা থেকে তোলা ছবি
প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছিল সৌরবিদ্যুতের সড়কবাতি। তিন বছর না যেতেই এসবের অবস্থা এখন নিবু নিবু। বেশির ভাগ বাতি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেলেও সারানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউই। ফলে রাতের অন্ধকারে চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ৩৭৮টি সৌর সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) এসব সড়ক বাতি স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে।

‘সোলার হোম স্ট্রিট লাইট’ নামের প্রকল্পে প্রতিটি সড়কবাতি স্থাপনের ব্যয় ধরা হয় ৫৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৩৭৮টি সড়ক বাতি স্থাপনে প্রকল্পের ব্যয় হয় ২ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থাপন করা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি শুনেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নষ্ট সড়কবাতিসহ সব সারানোর জন্য নতুন অ্যাগ্রিমেন্ট করবে।’
জামিরুল ইসলাম, ইডকল ময়মনসিংহ জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সন্ধ্যা সাতটার পর বেশির ভাগ সড়কবাতি জ্বলছে না। কিছু সড়কবাতি মিটিমিটি আলো দিয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যেই নিভে যাচ্ছে।

শ্রীপুরের গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখাঁর চালা চার রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চারটি সৌর সড়কবাতির মধ্যে দুটি একদমই জ্বলে না। বাকি দুটি ঘণ্টাখানেক আলো দেওয়ার পর নিভে যায়। হায়াতখাঁর চালা চার রাস্তার মোড়ে বিদ্যুতের আলোর ব্যবস্থা নেই। তাই সৌর বাতিগুলো নিভে গেলে ওই অংশে অন্ধকার নেমে আসে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, বাতিগুলো লাগানোর দুই বছর পর থেকেই এগুলো কাজ করছে না। কেউ এসে এগুলো মেরামতও করে না। ফলে এখানে অন্ধকারে লোকজনের চলাচলের সমস্যা হয়।

বরমী ইউনিয়নের শিমুলতলী এলাকায় দুটি সৌর সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। সব নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এই বাতিগুলো প্রায় ৯ মাস ধরে জ্বলে না। সড়কবাতির খুঁটির মধ্যে ইডকল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে। ওই নম্বরে ফোন দিয়ে জানানোর পরেও সেগুলো সারানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এসব সৌরবাতি বসানোর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যন্ত গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মোড় আলোকিত করা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ উদ্দেশ্য খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ কে এম মোহিতুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইডকল এগুলো স্থাপন করার পর রক্ষণাবেক্ষণ যথাসময়ে করেনি। আমরা তাদের বারবার তাগিদ দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আবারও বলব। সড়কবাতিগুলোর সার্ভিসিংয়ের আওতায় আনলে এগুলো আবার সচল হয়ে যাবে।’

গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ খাশপাড়া এলাকায় সৌরবাতিটি ছয় মাস ধরে কাজ করছে না। বাতিটি রক্ষণাবেক্ষণে কাউকে কাজ করতে দেখেননি স্থানীয় লোকজন।

গোসিংগা ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি গ্রামের একটি স্থানে দুটি সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। এর একটি সাত মাস ধরে কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। ওই এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, দুটি বাতি যখন জ্বলত, তখন এই এলাকা আলোকিত থাকত। মাত্র দুই বছরের মাথায় বাতিগুলোর একটি নষ্ট হয়ে গেছে। অপর বাতিটি প্রতি রাতে তিন থেকে চার ঘণ্টা আলো দিয়ে নিভে যায়। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

বরমী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে দুটি সৌর সড়কবাতির মধ্যে একটি এক ঘণ্টার মতো মিটিমিটি জলে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা। অপরটি চার-পাঁচ ঘণ্টা আলো দেয়। ঠাকুরতলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, শুরুতে বাতিগুলো সারা রাত আলো দিত। কিন্তু এক-দেড় বছর যেতে না যেতেই এগুলোর আলো কমতে থাকে। বর্তমানে দুটির একটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।

ইডকল ময়মনসিংহ জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থাপন করা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি শুনেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নষ্ট সড়কবাতিসহ সব সারানোর জন্য নতুন অ্যাগ্রিমেন্ট করবে।’