শরীয়তপুরে সংঘর্ষে বোমা হামলায় ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল দুজনের

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের চরধুপুরিয়া কাচারি কান্দি গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়। এতে ককটেল বোমা হামলায় আহত হয়ে ফিরোজ সরদার (৩৫) এবং টেঁটাবিদ্ধ হয়ে রফিক সরদার (৪৫) নিহত হন। তাঁরা দুজনই চরধুপুরিয়া কাচারি কান্দি গ্রামের বাসিন্দা।

জাজিরা থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেনেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য বাদশা সরদারের সঙ্গে বর্তমান ইউপি সদস্য দেলোয়ার সরদারের বিরোধ চলছে। ওই এলাকার বাসিন্দা খালেক সরদার ও আবদুর রব সরদারের পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে মামলা চলছে। দেলোয়ার সরদার এ ঘটনায় খালেক সরদার পরিবারের এবং আবদুর রব সরদারের পরিবারের পক্ষ নেন বাদশা সরদার।

গতকাল বিকেলে তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। এর জেরে সংঘর্ষে জড়ান দুই পক্ষের সমর্থকেরা। এতে উভয় পক্ষ ৫০–৬০টি হাতবোমা ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সংঘর্ষে বোমার আঘাতে খালেক সরদারের ছেলে ফিরোজ সরদার আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের সময় আরও অন্তত ২৫ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে রফিক সরদারের চোখেমুখে টেঁটাবিদ্ধ হয়। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে তিনি মারা যান। বাকি আহত ব্যক্তিদের শরীয়তপুর সদর, জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের অন্তত ১৫টি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

নিহত ফিরোজ সরদারের চাচি তাহমিনা বেগম বলেন, ‘ফিরোজ ঢাকায় থাকত। এলাকার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গতকাল গ্রামে আসে। ওরা এভাবে আমাদের সন্তানকে মেরে ফেলবে, ভাবতে পারিনি। কী অপরাধ ছিল ওর? যারা ফিরোজকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’

ঘটনার পর থেকে দুই পক্ষের পুরুষ সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। সেনেরচর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য বাদশা সরদার ও বর্তমান ইউপি সদস্য দেলোয়ার সরদারের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের বিষয়ে জানার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু দেশি অস্ত্র রামদা, ছেনদা ও টেঁটা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ১০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ফিরোজের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি এজাহার দেওয়া হয়েছে। রফিকের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ এখনো দেওয়া হয়নি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।