‘খিদার কষ্ট সওন যায়, শীতের কষ্ট যায় না’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে রোববার বিকেলে কম্বল বিতরণ করা হয়। বরিশাল নগরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

বরিশাল নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কেডিসি বস্তির বাসিন্দা সাফিয়া বেগম (৭০)। বয়সের ভারে শরীর নুয়ে পড়লেও এখনো তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করে দুই বেলা আহার জোগান। স্বামী বৃদ্ধ, বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। ছোট্ট খুপরিতে থাকেন। খাওয়া–পরায় টানাটানির মধ্যে এ শীতের কষ্ট তাঁদের জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে।

এ অবস্থায় নতুন কম্বল হাতে পেয়ে সাফিয়া বেগম বলছিলেন, ‘বাবা, এই ফির যে শীত পড়ছে হ্যাতে রাইতে ঘরে তরাইতে পারি না। প্যাটের জ্বালা সইলেও শীতের কষ্ট সওন যায় না। ঘরের বেড়ার ফাঁকফোকর দিয়া ফুর ফুর কইর্যা কাল (ঠান্ডা) বাতাস আয়। পাতলা খাতায় (কাঁথা) শীত মানে না। খাওন জোডামু না গরম কাপুড় কিনমু? আপনেগো কম্বল পাওনে এহন ঠান্ডায় গোনে (থেকে) আছান পামু।’

বরিশাল নগরের বগুড়া রোডে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে আজ রোববার বিকেলে ৯০ জনকে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া নগরের কালিজিরা, দক্ষিণ আলেকান্দা এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাণ্ডব নদের তীরে কৃষ্ণকাঠি গ্রামের আরও ৬০ জন অসহায়, দুস্থ ও প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। বরিশাল বন্ধুসভার সদস্যরা এসব কম্বল বিতরণ করেন।

সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেন বরিশালের প্রবীণ শিক্ষাবিদ শাহ সাজেদা, বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হোসেন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ, বালিকা বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক জেসমিন নাহার, বন্ধুসভার জেলা সভাপতি নাঈম ইসলাম, সহসভাপতি মেহেদী হাসান পিয়াস।  

আরও পড়ুন
কম্বল পেয়ে খুশি সবাই
ছবি: প্রথম আলো

নগরের সাগরদী এলাকার সামসুন্নাহার বেগমের (৫৫) তিন ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকছেন। মেয়েকে নিয়ে তিনজনের সংসার। মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। কম্বল পেয়ে সামসুন্নাহার বলেন, ‘শীতে একছের কষ্ট পাইতাম। কম্বল পাওনে এহন একটু শান্তিতে রাইতে ঘুমাইতে পারমু। কম্বল পাওনে মোর অনেক উপকার অইছে।’

নগরের বাংলাবাজারের একটি বাড়িতে তত্ত্বাবধায়কের চাকরি করেন বৃদ্ধ আবদুল খালেক (৭০)। তাঁর সঙ্গে আছে প্রতিবন্ধী এক ছেলে। খেয়ে না খেয়ে সংসারটাকে টেনে নিচ্ছে খালেক। কম্বল পেয়ে তাঁর মুখেও হাসির ঝিলিক। তিনি বলেন, ‘পোলাপান সব দূরে গ্যাছে, মুই যে আয় করি, তা দিয়া সংসার চালামু না শীতের কাপুড় কিনমু।  কেউ খোঁজ নেয় না। তোমরাই খোঁজ নিয়া কম্বল দেলা, মনডা খুশিতে ভইর‌্যা গ্যাছে।’

আরও পড়ুন

এর আগে গতকাল শনিবার বন্ধুসভার সদস্যরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে নগরের কালিজিরা, দক্ষিণ আলেকান্দা, কেডিসি, রূপাতলী, সাগরদি এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের পাণ্ডব ও রাঙামাটি নদ-নদীর তীরে কৃষ্ণকাঠি গ্রাম ঘুরে ঘুরে দরিদ্র পরিবারগুলোর তালিকা করেন। এরপর রোববার এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড (কনকা)। শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে পাঁচ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনুদানের টাকায় কেনা কম্বল অসহায় শীতার্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন। ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৩ টাকা অনুদান এসেছে।