তিন মেয়ে নবজাতকসহ খুলনা মেডিকেলে ভর্তি ময়না, চিকিৎসার টাকা নেই
তিন মেয়ে নবজাতকসহ ময়না বেগমকে (৩৫) বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছেন স্বজনেরা। সেখানে তিন নবজাতককে বেবি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই ময়নার পরিবারের।
গত শনিবার দিবাগত রাতে প্রসবব্যথা উঠলে ময়না বেগমকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোববার স্বাভাবিকভাবে তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
খুলনায় ময়না বেগমের সঙ্গে থাকা তাঁর ছোট বোন রশিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর অসুস্থ থাকার পর চার মাস আগে তাঁদের বাবা মারা যান। তাঁদের মা পিয়ারা বেগম চেয়ে–চিনতে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলেন। বোন ও তিন ভাগনির চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাঁদের।
ময়নার ছোট বোনের স্বামী রনি শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুলনায় ডাক্তার কিছু ওষুধ–ইনজেকশন দিছে। সাহায্য তুলে গতকাল তা–ই কিনছি। এখন আবার ওষুধ লিখছে, কীভাবে কিনে দেব, জানি না। একটু সাহায্য পাইলে হয়তো বাচ্চা কয়টারে বাঁচানো যায়।’
ময়না বেগমের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন তাঁর মা পিয়ারা বেগম। তিনি বলেন, তাঁর মেয়েকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে। আর নাতনিরা রয়েছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনকিউবেটরে।
ময়না বেগম ও তাঁর স্বামী জামাল হাওলাদার কাজ করতেন চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায়। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রামের ভাড়া বাসায় রেখে চলে যান তিনি। এরপর আর কোনো খোঁজ নেননি স্ত্রীর।
মাসখানেক আগে অনেকটা বাধ্য হয়ে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে মায়ের কাছে চলে আসেন ময়না। তাঁর স্বামী জামাল হাওলাদারের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রিয় গোপাল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ময়না বেগম। তিন নবজাতকই মোটামুটি সুস্থ। তবে ওজন কম। একটির ওজন দেড় কেজি, একটির এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওবং আরেকটির এক কেজি ৩০০ গ্রাম। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় আমরা তাদের বাগেরহাট সদর হাসপাতালের বেবি ইনকিউবেটরে নিতে বলেছি। শুনেছি, স্বজনেরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে মা ও তিন নবজাতককে।’
আগে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে ময়না বেগমের। তাঁর মা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘ভিক্ষা করে পেট চালাই। এর মধ্যে মেয়েকে রেখে জামাই চলে গেছে। এখন তিন সন্তান হইছে মেয়ের। হাসপাতালে নিতে হইছে। চিকিৎসা করানোর টাকা কই পাব, জানি না।’