অপহরণের পর পাঁচ দিন ধরে বাবাকে শোনানো হচ্ছে ছেলের আর্তনাদ

অপহরণের শিকার রিয়াজুল হাসান
ছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার আসার পথে গত মঙ্গলবার অপহৃত হন রিয়াজুল হাসান (১৮) নামের এক তরুণ। অপহরণের ঘটনার পর গত পাঁচ দিন ধরে রিয়াজুলের বাবা ফেরদৌস আলমের মুঠোফোনে কল করে শোনানো হচ্ছে ছেলের আর্তনাদ। নির্যাতনের শিকার ছেলের এমন অবস্থায় দিশাহারা বাবা। পাশাপাশি অপহরণকারীরা মুক্তিপণের টাকা না পেলে রিয়াজুলকে হত্যার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে।

রিয়াজুলের বাবা ফেরদৌস আলম পেশায় অটোরিকশাচালক। কয়েক মাস আগে রিয়াজুল বাড়ি থেকে রাগ করে বের হয়ে কক্সবাজারের একটি দোকানে চাকরি নিয়েছিলেন। গত কোরবানির ঈদে তিনি বাড়ি আসেন। এরপর কর্মক্ষেত্রে ফেরার সময় ১৭ জুন তিনি অপহৃত হন। অপহরণকারীরা এরপর দফায় দফায় ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে। রিয়াজুলকে নির্যাতন করে শুনিয়েছে আর্তনাদ। তাঁর বাবা ফেরদৌস অপহরণকারীদের বলেছেন, তিনি গরিব মানুষ। মুক্তিপণের কোনো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এখন অপহরণকারীরা ১ লাখ টাকা চাইছে। তা–ও ফেরদৌসের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। লোহাগাড়া, কক্সবাজার ও টেকনাফ থানার পুলিশের কাছে ছেলেকে উদ্ধারের জন্য ধরনা দিয়েছেন ফেরদৌস। তবে এখনো রিয়াজুলকে উদ্ধার করা যায়নি।

পুলিশের কাছ থেকে ছেলের মুঠোফোনের অবস্থান জানতে পারার পর গতকাল শুক্রবার টেকনাফ থানায় আসেন ফেরদৌস আলম। সেখানে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭ জুন বেলা দুইটার দিকে লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে রিয়াজুল নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। পরে লোহাগাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। উদ্ধার করতে না পারলেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে পুলিশ তাঁর মুঠোফোনের অবস্থান জানতে পেরেছে। একবার কক্সবাজারের টেকনাফে ও আরেকবার নারায়ণগঞ্জে মুঠোফোনটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে মারধর করা হচ্ছে। তার আর্তনাদ ফোনে শোনানো হচ্ছে। অপহরণকারীরা এখন ১ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেবে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু আমার ওই টাকা দেওয়ারও সামর্থ্য নেই। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে বারবার যাচ্ছি। কিন্তু ছেলেকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আমার ছেলেকে বাঁচান। যেকোনো মুহূর্তে ছেলেকে হত্যা করা হবে।’

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজার আসার পথে অপহৃত তরুণকে উদ্ধারে পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে এখন ফোন নম্বরটি সর্বশেষ অবস্থান পাওয়া যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। পুলিশ এ বিষয়ে কাজ করছে।

এ ব্যাপারে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আরিফুর রহমান বলেন, অপহৃত ছেলেটি কক্সবাজার এলাকায় চাকরি করতেন। সংবাদ পেয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর অবস্থান টেকনাফের হ্নীলায় এলাকায় শনাক্ত হওয়ায় উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য টেকনাফ থানার ওসি বরাবর বার্তা পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এ নিয়ে গত সাড়ে ১৭ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫৪ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।