মধু চাষ করেই বছরে ৮ লাখ টাকা আয় কালা বাবু চাকমার

নিজের তৈরি মৌবাক্স থেকে মৌচাক বের করে মধুর পরিমাণ দেখছেন মৌচাষি কালাবাবু চাকমা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরের মহাজনপাড়া এলাকায়প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি সদরের মহাজনপাড়া এলাকার বাসিন্দা কালাবাবু চাকমা (৫৫)। আম, ড্রাগন, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করে সংসার চলত তাঁর। তবে এখন বাগানের আয়ের বাইরেও বছরে আট লাখ টাকার বেশি আয় করেন কেবল মধু চাষ করে।

প্রায় এক যুগ আগে অনেকটা শখের বশে ২টি মৌবাক্স বসিয়ে মধু চাষ শুরু করেছিলেন কালাবাবু। তাঁর মৌবাক্সের সংখ্যা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছিল। তবে করোনার প্রকোপের সময় দিতে না পারায় নিজেই বাক্সের সংখ্যা কমিয়ে আনেন। এখন তাঁর রয়েছে ৪৫টি মৌবাক্স। মধু আর মৌমাছির সঙ্গে দারুণ মিতালি গড়েছেন তিনি। তাঁকে মধু চাষে সংগ্রহ করেন তিনজন শ্রমিক।

কালাবাবু চাকমা কেবল নিজের বাগানে মধু চাষ করেন না। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত অনেকের লিচু, আম, মাল্টা, ড্রাগন, শর্ষেসহ বিভিন্ন বাগানেও বসিয়েছেন মৌবাক্স। উপজেলার মহাজনপাড়া, খবংপুড়িয়া, পেরাছড়া, শিবমন্দির, মুনিগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব বাগান অবস্থিত।

সম্প্রতি খবংপুড়িয়া এলাকার একটি ড্রাগন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে বসানো হয়েছে বেশ কিছু মৌবাক্স। এর মধ্যে কিছু প্লাস্টিকে এবং বাকিগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি। একটি বাক্স থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছেন কালাবাবু চাকমা।

জানতে চাইলে কালাবাবু চাকমা বলেন, একটি কাঠের মৌবাক্স বসাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। প্লাস্টিকের বাক্সের দাম পড়ে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা। পাহাড়ে মধু সংগ্রহ করার ভালো সময় হচ্ছে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত। এ সময় বিভিন্ন গাছে প্রচুর ফুল থাকে।

কালাবাবু চাকমা আরও বলেন, একটি বাক্স থেকে বছরে তিনবার মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবার ছয় কেজি করে একটি বাক্সে মধু পাওয়া যায় ন্যূনতম ১৮ কেজি। প্রতি কেজি মধু ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা যায়। এ হিসাবে এখন প্রতিবছর তাঁর ৪৫টি মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ হয় ৮১০ কেজি। এসব মধু গড়ে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বছরে আয় ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মধু চাষের পাশাপাশি এ বিষয়ে নিয়মিত অন্যদের পরামর্শ ও সহায়তাও দিয়ে আসছেন বলে জানান কালাবাবু। তিনি বলেন, অনেকে তাঁর কাছে শিখতে আসেন, কেউ আসেন পরামর্শ নিতে। সবাইকে তিনি তাঁর সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেন। আবার চাহিদা অনুযায়ী চাষিদের কাঠের এবং প্লাস্টিকের বাক্সও তৈরি করে দেন। এ ছাড়া রানি মৌমাছি সংগ্রহ করে করে ঘরে গিয়ে বাক্সে বসিয়ে দিয়ে আসেন এবং মধুও সংগ্রহেও সহযোগিতা করেন তিনি। জেলার বাইরে থেকে এসেও অনেকে তাঁর কাছ থেকে বাক্স, রানি মৌমাছি নিয়ে যান।

মধু সংগ্রহ নিয়ে হতাশাও দেখা যায় কালাবাবুর। তিনি বলেন, ৫ বছর আগেও অনেক মধু পাওয়া যেত। আগে বাড়ি এবং বাগানের আশপাশে অনেক বড় বড় গাছ ছিল, যেকোনো বাগানে বাক্স বসিয়ে দিলেই মধুতে বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে উঠত। আর এখন গাছপালা কমায় মৌসুম অনুযায়ী বাগান খুঁজে বাক্স বসাতে হয়, মধুও মিলছে কম।

কালাবাবু চাকমা আরও বলেন, অনেক সময় বাগানে বসানো বাক্স নষ্ট করে দিয়ে চলে যান কেউ কেউ। আর মৌ চাষের প্রধান শক্র পিঁপড়া। পিঁপড়া বাক্সে গিয়ে মধু এবং পোকাগুলো নষ্ট করে ফেলে। এ ছাড়া কিছু পাখিও মৌমাছি খেয়ে ফেলে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কালাবাবু চাকমা মধু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা এবং পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। তাঁকে দেখে অনেকেই মধু চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।