স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নোয়াখালী মেইল ট্রেনের ধাক্কায় স্ত্রী-সন্তানদের সামনেই প্রাণ হারিয়েছেন রায়হান মিয়া (৩৫) নামের এক যুবক। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা শহরের পুনিয়াউট লেবেল ক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার তদন্তে রেলওয়ে ও রেলপুলিশ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত রায়হান মিয়া কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পুনিয়াউটের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি খননযন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) পরিচালনা করতেন। দুর্ঘটনায় রায়হানের আট বছর বয়সী মেয়ে ইকরা জাহান মাথায় আঘাত পেয়েছে।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন রায়হান। বৃহস্পতিবার রাতে ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছান তিনি। রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পরিবার নিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খান। খাবার শেষ করে রিকশায় করে জেলি পুনিয়াউটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। রিকশা রেলের লেবেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে আসা নোয়াখালীগামী ‘নোয়াখালী মেইল’ ট্রেন তাঁদের রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে রায়হান ও তাঁর মেয়ে ইকরা আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিলে রায়হানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে তার স্ত্রী ও অন্য সন্তানেরা অক্ষত আছেন। ঘটনার পর রিকশাচালক পালিয়ে যান।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার অভিযোগ করেন, রাতে রিকশায় করে বাসায় ফেরার সময় পুনিয়াউট লেবেল ক্রসিংয়ে প্রতিরোধক তোলা ছিল। তাই রিকশা বিনা বাধায় ক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর স্বামী নিহত হন ও এক মেয়ে আহত হয়। লেবেল ক্রসিংয়ে প্রতিরোধক নামানো থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না বলে দাবি করেন তিনি।

এ ঘটনায় রেলওয়ের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির সদস্যরা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তবে গেটম্যান সুমন মিয়া জানিয়েছেন, লেবেল ক্রসিংয়ে প্রতিরোধক নামানো ছিল। ওই যাত্রীরা নিজেরা প্রতিরোধক উঠিয়ে লেবেল ক্রসিং এলাকা পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় একজন মারা যান।

আখাউড়া রেলওয়ে জংশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি, পুনিয়াউট লেবেল ক্রসিং এলাকায় গেটম্যান গেট ফেলেননি। আমাদের পরিদর্শক সেখানে গিয়েছেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করব। এ ঘটনায় রেলওয়ে পুলিশ বিভাগ দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হবে। এ ছাড়া নিহতের পরিবার থেকে কোনো অভিযোগ এলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’