জনপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়ে বললেন, ‘নৌকার সাথে বেইমানি করব না’

রাজশাহী জেলা

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সামনে পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার ১১ জনপ্রতিনিধির শপথ নেওয়ার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ওই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী বলছেন, এটা ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। অন্যদেরও এটা করা উচিত।
ঢাকার ন্যাম ভবনে ওমর ফারুক চৌধুরীর সামনে গতকাল শনিবার সকাল নয়টার দিকে গোদাগাড়ী পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নয়জন চেয়ারম্যান পবিত্র কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করেন। আজ রোববার সকালে এই শপথ করানোর ভিডিও চিত্র ফাঁস হয়ে গেছে। এর পর থেকে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা।

ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বসে আছেন। তাঁর সামনে টেবিলে রাখা পবিত্র কোরআন শরিফে হাত রেখে জনপ্রিতিনিধিরা একে একে শপথ করছেন।

ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া পবিত্র কোরআনে হাত রেখে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন ওরফে সোহেলকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে কোনো দিন যাব না। মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকায় দলীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করব।’ এরপর তিনি থেমে গেলে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘নৌকার সাথে বেইমানি করব না।’ তখন কোরআনে হাত রেখে বেলালও একই কথা বলেন।

শপথ গ্রহণ শেষে ১১ জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে ছবিও তোলেন। এই ছবিতে গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম; গোদাগাড়ী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসসহ গোদাগাড়ীর নয়টি ইউপির নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের দেখা যাচ্ছে।

এই ভিডিও দেখে গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে তাঁর নিজস্ব নেতা–কর্মীকে অনুগত করে রাখার জন্য পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করাতে হয়!’

আখতারুজ্জামানকে গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার আগের মেয়াদে তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পর থেকে ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কারও নাম উল্লেখ করে কিছু বলেননি। যিনি পবিত্র কোরআন শপথ করিয়েছেন, তিনিই বুঝবেন।

দলীয় একটি সূত্র বলছে, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীর অনেক নেতাই সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী নন। গত নির্বাচনের আগে তাঁর বিরুদ্ধে সাতজন নেতা সেভেন স্টার গ্রুপ তৈরি করে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে এখনো তাঁর রাজনৈতিক সমঝোতা হয়নি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও সবাই তাঁর অনুসারী নন। তাঁদের নিজের কবজায় রাখতে সংসদ সদস্য এ কৌশল অবলম্বন করেছেন।

কোরআন শরিফ ছুঁয়ে শপথ করানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শপথ নিয়ে গিয়ে কোনো জনপ্রতিনিধি কী বলেছেন, তাঁদের জোর করে শপথ করানো হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই আগের দিনে একসঙ্গে বিমানে এসে তাঁকে বলেছেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চান। প্রয়োজনে কোরআন শরিফ ছুঁয়ে তাঁরা শপথ নেবেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের শুধু বলেছি, আমি এই শপথের একটি ভিডিও করে রাখব। পরে আমার সঙ্গে বেইমানি করলে আমি তোমার ইউনিয়নে এটা ছেড়ে দেব।’

ফারুক চৌধুরী বলেন, এটাকে ইতিবাচক কাজ হিসেবে দেখা উচিত। মানুষ সমালোচনা করবে কেন। সবকিছুকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার কী দরকার। এটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অন্যদেরও এটা করা উচিত।