ধর্ষণ মামলার আসামিদের ‘হুমকিতে’ বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না মেয়েটি

পিরোজপুর জেলার মানচিত্র

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় ধর্ষণের মামলা করার পর আসামিদের হুমকিতে ভুক্তভোগী কিশোরী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত মেয়েটি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল।

ঘটনার ১২ দিন পর গত শনিবার ধর্ষণের অভিযোগে ওই কিশোরীর নানি বাদী হয়ে রিশাদ হোসেন (২০) নামের এক তরুণকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। রিশাদ হোসেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের কচুয়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মামা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি জানার পর আমরা রিশাদ হোসেনের বাবাকে জানাই। তিনি আমাদের মামলা না করার জন্য ভয়ভীতি দেখান। এ ছাড়া রিশাদ হোসেনের চাচাতো ভাই মুঠোফোনে আমাকে হুমকি দেন। মামলা করার পর রিশাদ আমাকে ফোন করে দেখে নেওয়ার কথা বলেন। ভয়ে ও লোকলজ্জায় আমার ভাগনি বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’

মামলার এজাহার ও মেয়েটির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটির মা-বাবার বিচ্ছেদের পর সে নানির কাছে থাকে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে মেয়েটিকে ঘরে একা পেয়ে পাশের গ্রামের রিশাদ হোসেন ধর্ষণ করেন। এ সময় রিশাদ হোসেন এ ঘটনা কাউকে না জানাতে মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার কয়েক দিন পর মেয়েটি তার মামাকে এ ঘটনা জানায়। এরপর মেয়েটির নানি ও মামা রিশাদের মা–বাবাকে জানালে তাঁরা ভয়ভীতি দেখান। কোনো প্রতিকার না পেয়ে শনিবার দুপুরে মেয়েটির নানি বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় রিশাদ হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন।

মেয়েটির নানি বলেন, ‘রিশাদ আমার ছেলের বন্ধু। সে আমাদের বাড়িতে আসা–যাওয়া করত। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রিশাদ আমার ছেলের সঙ্গে আমাদের বাড়িতে ঘুমায়। ভোরে আমার ছেলে ও আমি কাজে চলে গেলে রিশাদ আমার নাতনিকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করে কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখায়। এর কয়েক দিন পর রিশাদ আমার নাতনিকে আবার ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বাধা দেয় এবং বিষয়টি আমার ছেলেকে জানায়। ঘটনার পর আমার নাতনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ঠিকমতো খাওয়া–দাওয়া করছে না। চুপচাপ ঘরে বসে থাকে। আসামিপক্ষের হুমকি ও লজ্জায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ রেখেছে।’

ঘটনার পর থেকে রিশাদ হোসেন পলাতক। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। রিশাদের চাচাতো ভাই মো. সৌরভ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো হুমকি দেননি।

মেয়েটির বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছে।

কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত রোববার পিরোজপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। আসামি রিশাদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মেয়েটির স্বজনদের হুমকির লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।