সাভারে ট্যানারিশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ
ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। আজ বুধবার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরের প্রধান ফটকসংলগ্ন সড়কে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকেরা।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানান, আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর প্রধান ফটকসংলগ্ন সড়কে বিভিন্ন ট্যানারির শতাধিক শ্রমিক অবস্থান নেন। পরে তাঁরা সেখানে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। দুই ঘণ্টা কর্মসূচি পালন শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা চলে যান।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকার ন্যূনতম মজুরির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কিন্তু এখনো সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে এখন দুই ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছি। এরপরও যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে আধা বেলা, তারপরও না হলে কারখানা বন্ধ করে দেব। সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করছে, তা বাস্তবায়ন করে ছাড়ব।’
শ্রমিক হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার বেতন ১০ হাজার টাকা। বহুদিন ধরে আমাদের বেতন বাড়ানো হয় না। এই বেতন দিয়া সংসার চলে না, জীবন চলে না। যত দিন মালিকেরা আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না করবেন, তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। মালিকপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন দ্রুত এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। মালিকদের পক্ষ থেকে ন্যায়সঙ্গত কোনো বিষয় থাকলে, সেটি নিয়ে পরে আলোচনা করা যেতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাস্তবায়নের ঘোষণা না দেওয়া হলে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকদের কাছেও আমাদের অনুরোধ থাকবে, তাঁরা যেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেন।’
গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ট্যানারিশিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরিকাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে রয়েছেন স্ক্রিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান ও বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা। বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার ট্যানারিশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা এবং চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের নিম্নতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।