দুই আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে বন্দুকের বাঁট তৈরি করেছেন কাঠমিস্ত্রি : আদালতে জবানবন্দি
বরিশালের উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার দুই ইউনিয়নের দুই আওয়ামী লীগের নেতার নির্দেশে টাকার লোভে বন্দুকের বাঁট তৈরি করেছিলেন কাঠমিস্ত্রি নুরুল হক। বন্দুকের বাঁট তৈরির অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আজ শনিবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই কাঠমিস্ত্রি এসব কথা বলেন।
সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. ফোরকান হোসেন হাওলাদার আজ কাঠমিস্ত্রি নুরুল হকের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওই জবানন্দিতে তিনি আওয়ামী লীগের দুই নেতার নামও বলেন। ওই দুই নেতা হলেন উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. লিটন ও গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার উত্তর সাকোকাঠি গ্রাম থেকে বন্দুকের বাঁট তৈরির অভিযোগে কাঠমিস্ত্রি নুরুল হককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মো. শাহীন বাদী হয়ে নুরুল হক এবং আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির ও মো. লিটনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ফোরকান হোসেন বলেন, বন্দুকের বাঁট তৈরির ঘটনায় গ্রেপ্তার কাঠমিস্ত্রি নুরুল হক আজ শনিবার সকালে বরিশাল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নুরুল হক জবানবন্দিতে আদালতকে জানান, অর্থের লোভে তিনি বন্দুকের বাঁট তৈরি করছিলেন। উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. লিটন ও সরিকল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে তিনি বন্দুকের বাঁট তৈরি করছিলেন। জবানবন্দি শেষে নুরুল হককে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান আদালত।
নুরুল হককে বন্দুকের বাঁট তৈরির নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবিরের কথা বলার জন্য আজ শনিবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে হয়রানি করতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নুরুল হককে দিয়ে আমার কথা বলিয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’
আরও পড়ুন: ফার্নিচারের দোকানে বন্দুকের বাঁট তৈরির অভিযোগে কাঠমিস্ত্রি গ্রেপ্তার
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়ন একসময় সর্বহারা-অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের ফলে সর্বহারাদের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনরায় সর্বহারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাবেক সর্বহারা নেতারা গোপনে গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন।
থানাহাজতে থাকা কাঠমিস্ত্রি নুরুল হকের কাছে বন্দুকের বাঁট তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পেটের দায়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। বর্তমানে তেমন কোনো কাজ নেই। তাই অর্থের লোভে বন্দুকের বাঁট তৈরির অর্ডার নিই। আমার অর্ডার নেওয়া ঠিক হয়নি।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের উত্তর সাকোকাঠি গ্রামের একটি ফার্নিচারের দোকানে বন্দুকের বাঁট তৈরি করা হচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক কাঠমিস্ত্রি নুরুল হককে (৪৮) বন্দুকের বাঁটসহ আটক করে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে নুরুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। নুরুল হককে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার দিনভর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. ফোরকান হোসেন হাওলাদার বলেন, নুরুল হক আজ শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় হওয়া মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।