নাটোরে যুবলীগ নেতার করা মামলায় বিএনপির ১৯ নেতা–কর্মী কারাগারে

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নাটোরের দায়রা জজ আদালতে ২৬ নেতা-কর্মী আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরে যুবলীগ নেতার করা মামলায় বিএনপির ১৯ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নাটোরের দায়রা জজ আদালতে ২৬ নেতা-কর্মী আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ১৯ জনের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

সদর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া বাজারে ‘সরকার উৎখাতের বৈঠক থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো ও ককটেলের মজুত রাখার অভিযোগে’ গত বছরের ২১ নভেম্বর রাতে নাটোর সদর থানায় মামলা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে হওয়া মামলার বাদী যুবলীগ কর্মী রবিউল প্রামাণিক (৪০)। মামলায় সদর উপজেলার দীঘাপতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।

দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে ওই মামলার ২৬ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ১৯ জনের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে অপর সাতজনকে জামিন দেওয়া হয়। কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদও আছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আলী আজগর খান বলেন, একটি বিতর্কিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলাটি করা হয়েছিল। রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশে যেতে বাধা দিতে প্রতিপক্ষের লোকজন ২১ নভেম্বর রাতে ডাঙ্গাপাড়ার মতো অজপাড়া গ্রামের একটি বাজারে রাতের অন্ধকারে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ও কিছু ককটেল রেখে যান। এ ঘটনার অনেক আগে থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন, এমন ব্যক্তিকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবুও পুলিশ এ মামলা গ্রহণ করে। মামলার পর আসামিরা হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেন। ছয় সপ্তাহ তাঁদেরকে পুলিশ এই মামলায় গ্রেপ্তার করবে না, এমন আদেশ দিয়ে উচ্চ আদালত তাঁদেরকে দায়রা জজ আদালতে পাঠান। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৬ জন আসামি আদালতে হাজির হলে আদালত সাতজনের জামিন দেন এবং অন্য ১৯ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘বিএনপির ১৫০ জনের বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মীর মামলা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগের দিন প্রথম আলোর অনলাইনেও এ–সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সময় সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয় লোকজন এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ২১ নভেম্বর রাতে ডাঙ্গাবাজারে কোনো বৈঠক হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী এক অটোরিকশাচালক বলেছিলেন, রাত পৌনে ৯টার দিকে পরপর তিনটি বিকট শব্দ শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে সেতুর কাছে গিয়ে দেখেন, হেলমেট পরা ১১ জন লোক ৪টি মোটরসাইকেল চালিয়ে দ্রুত শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন।

ঘটনাস্থলের ২০ হাতের মধ্যে ফারুক মণ্ডলের চায়ের দোকান। তিনি আরও বলেন, রাতে ডাঙ্গাপাড়া বাজারে কোনো জমায়েত বা বৈঠক হতে দেখেননি। তবে ককটেল ফাটিয়ে কয়েকজন অপরিচিত যুবককে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে দেখেছেন।

যেখান থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে আবদুল খালেকের চায়ের দোকান। দোকানে বসে থাকা তাঁর ছেলে শাওন আলী বলেন, তিনি ককটেল উদ্ধার করতে দেখেননি। তবুও পুলিশ একটা কাগজে তাঁর স্বাক্ষর নিয়েছে। অনেকেরই নিয়েছে, তাই তিনিও স্বাক্ষর দিয়েছেন।