১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ উপজেলা গণগ্রন্থাগার

তালাবদ্ধ সরাইল উপজেলা গণগ্রন্থাগার। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার একমাত্র সরকারি গণগ্রন্থাগারটি ১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ। এতে সন্ধ্যার পর গ্রন্থাগারের আশপাশে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ১০ বছর ধরে পরিচালনা কমিটি না থাকায় এমনটি হয়েছে। পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরাইল উপজেলা গণগ্রন্থাগারটি। প্রতিষ্ঠার পর অন্তত দুই দশক পর্যন্ত এটি ছিল উপজেলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনস্থল। একসময় বই ও পত্রিকা পড়া, সাহিত্য–আড্ডা, কবিতাপাঠের আসর, ইতিহাসচর্চা, ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নজরুল-রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্‌যাপন, বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ নানা কর্মকাণ্ড এখানে হতো। প্রবীণদের কাছে এগুলো এখন স্মৃতির বিষয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে কয়েক বছর আগে দ্বিতল গণগ্রন্থাগার ভবনের নিচতলা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তালাবদ্ধ গণগ্রন্থাগার ভবনের বাইরের পরিবেশ দেখে বোঝা যায়, এখানে দীর্ঘদিন ধরে লোকজনের কোনো পদচারণ নেই। সন্ধ্যার পর ভবনের আশপাশে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। তখন এর আশপাশে চলে মাদক সেবন ও কেনাবেচা। গণগ্রন্থাগারে নেই নতুন বই, নেই মুক্তিযুদ্ধ বা বঙ্গবন্ধুর জীবনীবিষয়ক তেমন কোনো গ্রন্থ। নেই পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রায় ১০ বছর পরিত্যক্ত থাকার পর ২০১২ সালে তৎকালীন ইউএনও আনিসুজ্জামান খানের উদ্যোগে গণগ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটি গঠন এবং এর অবকাঠামোগত সংস্কার হয়। তখন তিনি এর জন্য কিছু নতুন বইও সংগ্রহ করেন। দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর কমিটি হয়নি। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। ব্যাহত হচ্ছে গ্রন্থাগারের উদ্দেশ্য।

চার লক্ষাধিক মানুষের সরাইল উপজেলায় ৪টি কলেজ ও ২৭টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সচল থাকলে স্থানীয় বাসিন্দা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারতেন। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মোজাম্মেল পাঠান বলেন, ‘পাঠাগারটি ছিল সাহিত্যসেবীদের প্রাণকেন্দ্র, অচলাবস্থার কারণে এখন এদিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। মনে হচ্ছে এর হাল ধরার মতো যেন কেউ নেই। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি উপজেলাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না।’

বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ এখলাছ-উর-রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এবং আলোকিত মানুষ গড়ার জন্য পাঠাগার বা গ্রন্থাগারের কোনো বিকল্প নেই। গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয়তুল্য গণগ্রন্থাগারটি গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত করা প্রয়োজন।’

সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে মানুষের মনোজগতের উৎকর্ষ সাধনের প্রয়োজন। এর জন্য বইপাঠের বিকল্প নেই। গণগ্রন্থাগারটি সচল হলে এলাকার শিক্ষিত তরুণ-যুবসমাজ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মিলনকেন্দ্র হবে এটি।’

উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি দেবদাশ সিংহ রায় বলেন, ‘আমরা ইউএনওকে অনুরোধ করছি এটি সচল করার জন্য। কিন্তু হচ্ছে না। এটি সচল হলে এলাকার সুশীল ও তরুণসমাজ সময় নষ্ট না করে সাহিত্যচর্চা ও পত্রপত্রিকা পড়ার সুযোগ পাবে। এতে তাদের বুদ্ধিমত্তার চর্চা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও গণগ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মেসবা উল আলম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে গণগ্রন্থাগারটি সচল করার লক্ষ্যে শিগগিরই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’