‘পার্কিং নিষেধ’ সাইনবোর্ডের নিচে ট্রাকস্ট্যান্ড, যানজট

ট্রাক রাখার জন্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালকেরা বলেন, সেখানে গিয়ে ট্রাক রাখলে তাঁরা ব্যবসা করতে পারবেন না।

সিলেট নগরের সার্কিট হাউস-কালীঘাট সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে ছোট-বড় ট্রাক ও পিকআপ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের সার্কিট হাউস এলাকা। পাশে সিলেট কোতোয়ালি থানা। আশপাশে আছে আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। ওই এলাকায় ‘পার্কিং নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি। তারপরও  সার্কিট হাউস-কালীঘাট সড়কজুড়ে রাখা হচ্ছে খালি ট্রাক ও পিকআপ। এতে সড়কে চলাচলের পথ সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই এলাকায় ট্রাক রাখা নিষেধ। শুধু মালামাল পরিবহন করা ট্রাকগুলো যাতায়াত করতে পারবে। ট্রাক রাখার জন্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালকেরা বলেন, সিটি করপোরেশনের ট্রাকস্ট্যান্ড শহরের বাইরে পড়েছে। সেখানে গিয়ে ট্রাক রাখলে তাঁরা ব্যবসা করতে পারবেন না।

গতকাল রোববার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কিং নিষেধ লেখা এসব সাইনবোর্ড সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে টাঙানো হয়েছে। সহযোগিতা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপরও কেউ এর তোয়াক্কা করছেন না। সারি করে সড়কের দুই পাশে ট্রাক ও পিকআপ রাখা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সার্কিট হাউস এলাকা দিয়ে নগরের ব্যস্ততম ব্যবসায়িক এলাকা কালীঘাট ও মহাজনপট্টিতে যাতায়াত করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ওই সড়কের সারি করে ট্রাক রাখা হয়েছে। সড়কের পাশের খালি অংশে আড়াআড়ি করে ট্রাক রাখা। এর মধ্যে আবার কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করে রাখা। বিকেল থেকে রাত ৯টার দিক পর্যন্ত ওই এলাকায় যানজটের কবলে পড়তে হয় পথচারীদের। এতে বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটে চলাচল করেন।

মাছুদীঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ী পীযূষ দাস বলেন, কালীঘাট থেকে পাইকারি মালামাল নিয়ে ব্যবসা করেন তিনি। এ জন্য প্রায়ই কালীঘাটে যান। এ সড়কে প্রায়ই যানজট হয়। ফলে যাওয়ার সময় হেঁটেই চলে যান। কিন্তু ফেরার সময় মালামাল নিয়ে রিকশা করে আসেন। যানজটে বসে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, খালি ট্রাক সড়কে রাখায় পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে পারে না। আবার সিলেটের পাইকারি বাজার কালীঘাট ও মহাজনপট্টি থেকে ট্রাকগুলো বের হতে পারে না। এতে গ্রাহক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষকেই ভোগান্তি পোহাতে হয়।

কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী হোসেন আহমদ বলেন, পাইকারি বাজারে পণ্যবোঝাই গাড়িগুলো মূলত রাতে আসে। এ সময় সড়কটিতে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাকগুলোর কারণে বাজারের ভেতরে মালামাল নিয়ে আসতে সমস্যা হয়। আবার দিনের বেলা গ্রাহকেরা পণ্য নিয়ে বের হওয়ার পথে যানজটে পড়েন। ট্রাকগুলো সরিয়ে অন্যত্র রাখা হলে ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত।

এদিকে ট্রাকচালকেরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্যই তাঁরা ওই এলাকায় ট্রাকগুলো রাখেন। মূলত সিলেট শহরের পাইকারি বাজার থেকে উপজেলা পর্যায়ে মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাকগুলো সেখানে রাখা হয়। সেখানে ট্রাক না রাখলে গ্রাহক পাওয়া মুশকিল হয় তাঁদের জন্য।

পার্কিং নিষেধ লেখা বোর্ডের নিচে ট্রাক রাখা আলতাব উদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশন ট্রাকস্ট্যান্ড বানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি বলতে গেলে শহরের বাইরে পড়েছে। সেখানে গিয়ে ট্রাক রাখলে কেউ কোনো ‘ট্রিপ’ দেবে না। যাঁরা মালামাল পরিবহনের জন্য গাড়ি খোঁজেন, তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশ থেকে নিয়ে যান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় যাতে ট্রাকস্ট্যান্ড বসানো না হয়, এ জন্য সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও চালকেরা সেখানে ট্রাক রাখছেন।

নূর আজিজুর রহমান আরও বলেন, চালকেরা নানা অজুহাতে ট্রাকস্ট্যান্ড ব্যবহার করছেন না। তাঁরা শহরের অভ্যন্তরেই স্ট্যান্ড চান। তবে শহরের অভ্যন্তরে স্ট্যান্ড করার মতো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কম জনবল নিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে সব সময়ই দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক বিভাগ। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানেও অংশ নিয়ে থাকেন তাঁরা।