মনিরামপুরে সাংবাদিকের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি যুবলীগ নেতার

সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন (বাঁয়ে) ও যুবলীগ নেতা এস এম লুৎফর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া কেন্দ্র করে যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় এক সাংবাদিকের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুবলীগের এক নেতা। গতকাল সোমবার রাতে মুঠোফোনে হুমকির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার মনিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকার মনিরামপুর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। মনিরামপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান মুঠোফোনে তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। লুৎফর রহমান উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং মনিরামপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি।

লিখিত অভিযোগে আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেন, গতকাল বিকেলে তিনি নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেন, ‘লিখতে পড়তে না জানা লোকও প্রেসক্লাবের সভাপতি হয়, এটা মনিরামপুরে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।’ এরপর সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে মনিরামপুর পৌর যুবলীগের সভাপতি এস এম লুৎফর রহমানের মুঠোফোন নম্বর থেকে তাঁর ফোনে একটি কল আসে। লুৎফর রহমান নিজের পরিচয় দিয়ে মোবাইলে তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে তিনি দুই দিনের মধ্যে তাঁর (সাংবাদিক) চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। যার কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। মনিরামপুরে সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন আছে। তাঁর পোস্টে তিনি কারও বা সংগঠনের নাম উল্লেখ করেননি। লুৎফর পোস্টটি নিজের দিকে নিয়ে তাঁকে হুমকি দেন। ঘটনার পর তিনি ও তাঁর পরিবার উদ্বিগ্ন।

এদিকে গতকাল রাত থেকে মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে যুবলীগ নেতা লুৎফর রহমানকে পরিচয় দিয়ে বলতে শোনা যায়, ‘এই আনোয়ার কী লিখিছো ফেসবুকি? কী লিখিছো আমারে নিয়ে? ওই যে অশিক্ষিত, প্রেসক্লাবের সভাপতি।...তুই কি আমারে ভালো করে চিনিস?...শালার বেয়াদব। শালার জামাত।...এই কত টাকা পাইছিস?...তোর চোখ উঠায়ে নেব। দুই দিন পর ওঠাব। দুই দিন পর তোর চোখ ওঠাব।...তুই প্রস্তুত হ। ২০০ টাকার সংবাদিক তুই। এই তুই কোন পত্রিকায় লিখিস?...আমি দুটো পত্রিকার মালিক। তুই লিখলি কেন? তোর হাত কত বড়? শালার জামাত। তোরে দেখে নেব আমি।’

অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মনিরামপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাবের এখনো তিনি সভাপতি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দুটি পত্রিকার মালিক। তিনি পৌর যুবলীগেরও সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এত দিন এ নিয়ে কথা হয়নি। যেই নৌকা হেরেছে, অমনি ইয়াকুব আলীকে (স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত) খুশি করার জন্য ফেসবুকে এসব লিখেছে আনোয়ার। সে আমার আত্মীয়। সম্পর্কে আমার বেয়াই। সে কেন এমন করল বুঝলাম না। আত্মীয়তার সুবাদে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে কোনো হুমকি দিইনি।’

মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মেহেদী মাসুদ বলেন, আনোয়ার হোসেনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।