পাবনায় নারীকে হত্যার পর বাড়ির মালামাল চুরি করে কক্সবাজার পালিয়েছিলেন আবিদ: পুলিশ

আজ শনিবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনার ঈশ্বরদীতে শোবার ঘর থেকে বৃদ্ধা হাজেরা খাতুনের (৭৬) লাশ উদ্ধারের রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার ও তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে এ রহস্য বেরিয়ে এসেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, বৃদ্ধা ওই নারীকে বাড়িতে একা পেয়ে প্রথমে চুরির পরিকল্পনা করেন আবিদ হাসান (২৪)। পরে চুরির সুবিধার্থে হত্যা করা হয় ওই নারীকে। এরপর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে কক্সবাজার গিয়ে গা ঢাকা দেন হত্যাকারী।

আজ শনিবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবিদ হাসান হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার।

গ্রেপ্তার আবিদ হাসান জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বিলসলঙ্গী জোলাপাড়া গ্রামের মৃত রতন আলীর ছেলে। আবিদ তাঁর মায়ের সঙ্গে ঈশ্বরদীর সাহাপুর নতুন হাট গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, এক জোড়া সিটি গোল্ডের চুড়ি ও দুই জোড়া স্বর্ণের কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

নিহত হাজেরা খাতুন উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল গোলাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রয়াত মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহর স্ত্রী এবং পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবুল ইসলামের বোন।
হাজেরা খাতুনের সাত সন্তানের দুজন দেশের বাইরে ও চারজন ঢাকায় থাকেন। তিনিও বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন। কয়েক দিন আগেই বাড়িতে এসেছিলেন। ৩ এপ্রিল তিনি বাড়িতে একাই ছিলেন। এদিন বেলা ১১টার দিকেও তাঁকে বাড়ির বাইরে দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকে তিনি আর বাড়ির বাইরে বের হননি। সন্তানোরাও মুঠোফোনে তাঁদের মাকে পাচ্ছিলেন না। বিকেলে তাঁরা বিষয়টি মামা হাবিবুল ইসলামকে জানান। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে হাবিবুল ইসলাম বাড়িতে ঢুকে বোনের শোবার ঘর তালাবন্ধ দেখতে পান। তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তাঁরা ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাজেরা খাতুনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, লাশ উদ্ধারের পর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও হত্যাকারীকে খুঁজতে পুলিশ মাঠে নামে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাসুদ আলমের তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। দলটি তথ্য–প্রমাণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে। পরে কক্সবাজারের কলাতলীর একটি হোটেল থেকে ১২ এপ্রিল রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আবিদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আবিদ ওই বৃদ্ধার বাড়িতে মাঝেমধ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। সেই সুবাদে হাজেরা খাতুনের বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করেন আবিদ। ঘটনার দিন সকালে আবিদ বাড়ির কিছু কাজ করে ৩০০ টাকা মজুরি নিয়ে চলে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে চুরির উদ্দেশে আবার ওই বাড়িতে যান। এ সময় হাজেরা নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। চুরির সুবিধার্থে আবিদ প্রথমে হাজেরাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় হাজেরা ধস্তাধস্তি শুরু করলে তিনি খাটের নিচে পড়ে যান। পরে আবিদ স্টিলের একটি বাটি দিয়ে হাজেরা মাথায় আঘাত করেন। পরে বালিশ চেপে ধরে হাজেরার মৃত্যু নিশ্চিত করেন আবিদ।

আরও পড়ুন

এরপর বৃদ্ধার পরনে থাকা চুড়ি, কানের দুল আবিদ খুলে নেন। এ ছাড়া আলমারি ভেঙে আরও এক জোড়া কানের দুল ও নগদ ৩০ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে আবিদ পালিয়ে যান। হত্যার পর আবিদ প্রথমে ঢাকা, তারপর মুন্সিগঞ্জ ও পরে কক্সবাজার গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার সব দায় স্বীকার করেছেন। আজ বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, জিয়াউর রহমান, বিপ্লব কুমার গোস্বামী ও পুলিশ পরিদর্শক হাসান বাসিরসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।