শ্রেণিকক্ষের দাবিতে ফার্মাসি বিভাগে তিন দিন ধরে ক্লাস বর্জন

শ্রেণিকক্ষের দাবিতে তিন দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের কক্ষের সংকট দূর করার দাবিতে তিন দিন ধরে ক্লাস বর্জন করছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাসে আসছেন না তাঁরা। এর আগে তাঁরা ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ২২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছিলেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মূলত শিক্ষকদের অন্তর্কোন্দল ও শিক্ষক রাজনীতির কারণে এই সংকটের সমাধান হচ্ছে না বলে তাঁরা মনে করছেন।

আন্দোলনরত বিভিন্ন ব্যাচের আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফার্মাসি বিভাগে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে পাঁচটি ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একটি ব্যাচ অধ্যয়নরত। কিন্তু বিভাগের শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি। শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনলাইনে ও অফলাইনের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন শিক্ষকেরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু শ্রেণিকক্ষের সংকটই নয়, বিভাগে শিক্ষকদেরও বসার জায়গা নেই। ১৯ জন শিক্ষক কর্মস্থলে অবস্থান করলেও তাঁদের বসার জন্য আছে মাত্র চারটি কক্ষ। এ কারণে শিক্ষা গবেষণা প্রস্তুতি গ্রহণে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিভাগের একাডেমিক সভায় হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকেরাও।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শ্রেণিকক্ষের সংকটের বিষয়ে তাঁরা বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কাছে দাবি জানানোর পর তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারকে একটি চিঠি দিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সে জন্য তাঁরা বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন।

ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছুটিতে দেশের বাইরে ছিলেন। আজই দেশে ফিরেছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে ফিরে এ বিষয়ে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে পাঁচটি ব্যাচ আছে। নতুন আরেকটি ব্যাচের পাঠদান শুরু হবে শিগগিরই। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর শ্রেণির রয়েছে একটি ব্যাচ। এই সাতটি ব্যাচের জন্য শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি, যা দিয়ে স্বাভাবিক পাঠদান করানো খুবই দুরূহ। এ পরিস্থিতিতে নতুন শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা না হলে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত চার বছরে একটি নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি করতে পারেনি। উপরন্তু, তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তিনটি নতুন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অথচ বেশ কয়েকটি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ মাত্র একটি করে। প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ওই শিক্ষকেরা।  

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ২৮ তারিখের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। আমরা বলেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষক উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিতর্কিত করতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছে। তা ছাড়া তিন দিন ধরে ক্লাস বর্জন করছে শিক্ষার্থীরা, অথচ বিভাগ থেকে প্রশাসনকে কিছুই জানানো হয়নি।’