‘এক জলেই সব হয় গো শুচি’—হরিজনপল্লিতে বন্ধুসভার দিনভর আনন্দ আয়োজন

প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বন্ধুসভার একটি ভালো কাজের অংশ হিসেবে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আনন্দ-আড্ডা-ভূরিভোজের আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরা রেলওয়ে সুইপার কলোনিতেছবি: প্রথম আলো

‘এক জলেই সব হয় গো শুচি’—লালনের এই চরণকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরা রেলওয়ে সুইপার কলোনিতে (হরিজনপল্লি) গতকাল শনিবার দিনব্যাপী আয়োজন হয় আনন্দ-আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভূরিভোজের। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘একটি ভালো কাজ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এটি ছিল বন্ধুসভার এ বছরের শততম আয়োজন।

সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনূরা জংশন–সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনির সুইপার মহল্লার বাসিন্দারা বহু বছর ধরে সামাজিক বৈষম্যের শিকার। স্থানীয় হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার সুযোগ পান না তাঁরা। এ বৈষম্যের ক্ষত ভুলে তাঁদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্ধুসভার সদস্যরা পল্লিতে যান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ট্রেনে করে বন্ধুরা আমনূরায় পৌঁছান। স্থানীয় বাজার থেকে খিচুড়ির উপকরণ কিনে কলোনিতে যান তাঁরা। উপকরণ কেটেছেঁটে দেন পল্লির তরুণেরা, রান্নাও করেন তাঁরাই। দুপুরে সবাই মিলে খিচুড়ি ও মুরগির মাংস খেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে হরিজনপল্লির শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসভার বন্ধুরা একসঙ্গে খাবার খান। গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরা রেলওয়ে সুইপার কলোনিতে
ছবি: প্রথম আলো

রান্নার আগে ও পরে চলে লালনের গান ও লোকসংগীত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘বাউল ভক্তকুল’-এর কাওসার রিপন লালনের গান পরিবেশন করেন, ব্যাঞ্জো বাজিয়ে সহযোগিতা করেন আবদুর রাকিব। এ ছাড়া বন্ধুসভার উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার ও সদস্য রমিজ অন্তর লোকগান পরিবেশন করেন। গানের তালে তালে নাচে যোগ দেন বয়স্ক নারী ফুরকুনি ভুঁইমালী, বৃদ্ধ লোটেন ভুঁইমালী, পল্লির শিশু ও বন্ধুসভার সদস্যরা।

সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পল্লির মোড়ল নগেন বাঁশফোড়, বন্ধুসভার উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার, আনোয়ার হোসেন, সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন জাগো নারী বহ্নিশিখার সভাপতি ফারুকা বেগম, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা খাতুন, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের জেলা সভাপতি রাজেন হরিজন, সাংগঠনিক সম্পাদক মধুমঙ্গল দাস ও উপদেষ্টা রথিন দাস।

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নগেন বাঁশফোড় বলেন, ‘দিনটি পল্লির লোকজন প্রাণভরে উপভোগ করেছে। নিজেদের সম্মানিত বোধ করেছি। আমার মনটা ভরে গেছে। দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

বন্ধুসভার সভাপতি আরাফাত মিলেনিয়াম বলেন, ‘সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানটি ছিল আমাদের একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। এটি বছরের শততম কর্মসূচি ও একটি ভালো কাজের অংশ। হরিজনপল্লির মানুষের সঙ্গে দিনটি দারুণ কেটেছে। বন্ধুদের জীবনে এটি স্মরণীয় ও শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’