জিয়া ও তাঁর পরিবারের হাতে রক্তের ছাপ: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

স্বজনদের বাঁধাই করা ছবি নিয়ে হাজির হন ১৯৭৭ সালে গণফাঁসির শিকার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। আজ শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এ দেশে গুমের রাজনীতি শুরু করেন খুনি জিয়া। বেছে বেছে বিমানবাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেন। জিয়া ও তাঁর পরিবারের হাতে রক্তের ছাপ। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, ’৭৭ সালের হত্যাকাণ্ড আর খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে হতাহতের ঘটনা ঘটান।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কুমিল্লায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এ সভার আয়োজন করে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠন। এটি ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ড, চাকরিচ্যুত সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।

‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আজ শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরানো হবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় জিয়ার লাশ নেই। একটা ছবি দেখাক ওরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে জিয়া যাঁদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল, তাঁদের আমরা ফেরত দিতে পারব না। তাঁদের কান্নাও থামাতে পারব না। কিন্তু পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার বাংলার মাটিতে হবে।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মায়ের কান্না সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বজলুল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাহিদ এজাহার খান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ বীর বিক্রম, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান। অনুষ্ঠানে মায়ের কান্না সংগঠনের সদস্য নাজমুল হাসান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘১৯৭৭ সালে আমার ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট আ ক ম মাইনুদ্দিনকে অন্যায়ভাবে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। আমি তখন ভাইকে খুঁজতে মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কাছে গেছি। কেউ বলতে পারেননি ভাই কোথায়? ভাইয়ের লাশ কোথায়?’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘মায়ের কান্না আপনি মুছে দেন।’

অনুষ্ঠানে করপোরাল মোবারক আলীর মেয়ে মমতাজ বেগম, সার্জেন্ট সাইদুর রহমান মিঞার ছেলে কামরুজ্জামান মিঞা, সার্জেন্ট দেলোয়ারের ছেলে নুরে আলম, সার্জেন্ট আফাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে মাসুদুল আলম, সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, সার্জেন্ট মোফরাকুল আলমের মেয়ে রিমনা বেগম, করপোরাল লরেন্স ডি রোজারিও কথা বলেন। তাঁরা স্বজনদের বাঁধাই করা ছবি নিয়ে হাজির হন। সেই সময়কার দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেন।

আলোচনা সভা থেকে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে জিয়াউর রহমানের সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নির্দোষ ঘোষণা; তাঁদের পদোন্নতি, বেতন–ভাতা–পেনশনসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া; ফাঁসি হওয়া ব্যক্তিদের শহীদ ঘোষণা ও কবরে স্মৃতিস্তম্ভ করা; পোষ্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া; ফাঁসি ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ; জিয়ার মরণোত্তর বিচার এবং সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়ার লাশ অপসারণ।