সেতুটি এখন মরণফাঁদ

২০০০ সালের ২১ অক্টোবর খিরাই নদের ওপর তৎকালীন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

সেতুর কয়েকটি স্থানে এমনভাবে ভেঙে গেলেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার খামারপাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার খামারপাড়া খিরাই নদের ওপর নির্মিত বেইলি সেতুটির স্থানে স্থানে পাটাতন ভেঙে গেছে। এতে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভেঙে যাওয়া এই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব–দক্ষিণাঞ্চল, মতলব দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ করার জন্য ২০০০ সালের ২১ অক্টোবর খিরাই নদের ওপর তৎকালীন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখন সেতুটির পাটাতনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সেতুর স্থানে স্থানে ভেঙে যাওয়ায় এটি দিয়ে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এই বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে ভয়ে ভয়ে চালাই। কারণ, মরিচায় নষ্ট হওয়া সেতুর পাটাতন ভেঙে গাড়ি যেকোনো সময় নদে পড়তে পারে।
গোলাম রাব্বানী, অটোরিকশাচালক

গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সেতুর ওপর উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। মনে হয়, এই বুঝি এটি ভেঙে পড়ছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খিরাই নদের ওপর নির্মিত এই বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে দাউদকান্দির খামারপাড়া, চশই, ধারিবন, চক্রতলা, কাটারাপাড়া, ভরণপাড়া, পালপাড়া, ধনেশ্বর, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার পিতাম্বর্দী, বকচর, ষোলদানা, কাচিয়ারা, খিদিরপুর, দাশেরবন্দর, নন্দীখোলা, কচুয়া উপজেলার মধুপুর, মালিগাঁও, বরদৌল, রান্দবপুর, ফতেবাপুর, আটমোর, বেরকোটা, শুয়ারুক এলাকার মানুষেরা নিয়মতি যাতায়াত করে। তাই সেতুটি পুনরায় সংস্কার করা একান্ত প্রয়োজন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক উপজেলার দক্ষিণ মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এই বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে ভয়ে ভয়ে চালাই। কারণ, মরিচায় নষ্ট হওয়া সেতুর পাটাতন ভেঙে গাড়ি যেকোনো সময় নদে পড়তে পারে।’

স্থানীয় কাচিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক সেলিম মিয়া বলেন, এ বেইলি সেতু অতিক্রম করতে গিয়ে দেবে যাওয়া পাটাতনে আটকে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।

দাউদকান্দির ধারিবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরুর আলম, কাচিয়ারা গ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী, পেয়ারীখোলা গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন বলেন, সেতুটি তিন উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য সেতুবন্ধ।

চশই উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রোমানা আক্তার, তার বড় বোন রিদমা আক্তার, মা জাহানারা বেগম বলেন, সেতুর দুই পাশের লোকজন নিজ প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই পারাপার হয়। তাই সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন।

কাচিয়ারা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শাকিব মিয়াজী বলে, সেতুর চারটি স্থানে পাটাতন দেবে যাওয়া সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে নিয়মতি দুর্ঘটনা ঘটছে। লোকজন আহত হচ্ছে। তাই যানবাহনের চালকদের সতর্ক করতে নিজ উদ্যোগে গাছের ঢালার সঙ্গে লাল কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছি।

মারুকার ইউপি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিস মিয়া ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, সেতুটি সংস্কারে নিয়মিত চেষ্টা চালাচ্ছি।

এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আফসার হোসেন খন্দকার বলেন, সেতুটি সরেজমিনে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।