ঢাকার কেরানীগঞ্জ
যত্রতত্র ‘ভ্রাম্যমাণ’ ফিলিং স্টেশন, দুর্ঘটনার শঙ্কা
ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশনগুলোতে কার্গো ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে থাকা সিলিন্ডার থেকে পাইপ ও ডিসপেনসার যন্ত্রের মাধ্যমে যানবাহনে গ্যাস ভরা হয়।
কেরানীগঞ্জের অন্তত ১২টি জায়গায় ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কার্যক্রম চলছে।
ফিলিং স্টেশনের মালিকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রশাসনের অনুমতি, ফায়ার সার্ভিস কিংবা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সনদ নেই। কর্মীদের সুরক্ষায় নেই কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে কার্গো ট্রাকে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন বানিয়ে সিএনজি (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিক্রি করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের অন্তত ১২টি জায়গায় এভাবেই ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবার চালু করা হয়। ফিলিং স্টেশনের মালিকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এ কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন বলছে, দ্রুত অবৈধ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।
কেরানীগঞ্জের জিনজিরা বাদামগাছতলা এলাকার স্বদেশ গ্লোরি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে ইদ্রিস মজুমদার (৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয়ে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন শহিদুল ইসলাম (৩২) ও মো. আসিফ (২৭) নামের ওই ফিলিং স্টেশনের দুজন কর্মী। ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশনটির কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বদেশ গ্লোরি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক স্থানীয় সাহেব আলী এবং ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন। তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ স্টেশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনো পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজল মিয়া বলেন, তাঁর জানামতে ওই ফিলিং স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের সনদ ছিল না। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে বেশ কিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে। শিগগিরই এসব ফিলিং স্টেশনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে অবৈধ ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের গদাবাগ, রোহিতপুর, তারানগর ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় কমপক্ষে ১২টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রাম্যমাণ সিএনজি ফিলিং স্টেশন গড়ে উঠেছে। কার্গো ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে থাকা সিলিন্ডার থেকে প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস নিয়ে সিএনজি ডিসপেনসার যন্ত্রের মাধ্যমে যানবাহনে ভরা হচ্ছে।
গদাবাগ এলাকায় ডিকে ফিলিং স্টেশন নামের একটি ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন দেখা যায়। সেখানে অবস্থানরত ওসমান মিয়া বলেন, বাদামগাছতলা এলাকার সিএনজি স্টেশনে আগুন লাগার পর সেখানকার কর্মচারীরা চলে গেছেন। এর পর থেকে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফিলিং স্টেশনটির মালিক কে, তা তিনি জানেন না।
ভাওয়াল মনোহরিয়া এলাকায় এলপিজি অটো গ্যাস অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন নামের আরেকটি ভ্রাম্যমাণ ফিলিং স্টেশন দেখা যায়। সেখানে কর্মরত গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা হয়। কাগজপত্র চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্র নেই। মালিকের কাছে আছে।’ প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
ভ্রাম্যমাণ অন্যান্য সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কথা বলেও একই রকম বক্তব্য পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমাণ আরটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ফিলিং স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের সনদ, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজ আছে। কাগজগুলো দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কেন কাগজ দেখাব? এগুলো আমি থানায় জমা দেব। আমি বৈধভাবেই ফিলিং স্টেশন পরিচালনা করছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিং স্টেশনের কার্গো ট্রাকের একজন কর্মচারী জানান, তাঁর মালিকের দুটি কার্গো ট্রাক আছে। তাঁরা কুমিল্লা থেকে পাইকারি দামে কার্গো ট্রাকে গ্যাস ভরে আনেন। প্রতি ট্রাকে কমপক্ষে ৫০টি সিলিন্ডার থাকে। একবার গ্যাসের চালান আনলে তিন থেকে চার দিন বিক্রি করা যায়।
অবৈধ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম। তিনি বলেন, প্রশাসনের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যতীত কোনো অবস্থাতেই ফিলিং স্টেশন চালাতে দেওয়া হবে না।