চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিজ কক্ষে দায়িত্ব পালনকালে রোগীসহ আবাসিক সার্জন ফয়সাল আল আহসানকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান নামের স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ অজ্ঞাতনামা আরও সাত-আটজনকে অভিযুক্ত করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসক। ঘটনার ছয় দিন পার হলেও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি।

আসাদুজ্জামান শহরের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। তিনি দৈনিক মতপ্রকাশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি এবং স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল স্বাধিকারের সম্পাদক। এ ঘটনায় তিনি চিকিৎসক ফয়সাল আল আহসানের বিরুদ্ধে সদর থানা ও সিভিল সার্জনের কাছে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে শহরের ট্রমা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. জুবায়েদ বাদী হয়ে গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দ্রুত বিচার আদালতে আসাদুজ্জামানকে প্রধানসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনের ধারায় একটি মামলা করেন। সংবাদ প্রকাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগটি আদালত তদন্ত করে আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

গত শনিবার সদর থানায় করা লিখিত অভিযোগে চিকিৎসক ফয়সাল আল আহসান বলেছেন, ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১১০ নম্বর কক্ষে তিনি রোগী দেখছিলেন। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা কামালকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন তিনি। তখন মো. আসাদুজ্জামান অজ্ঞাতনামা আরও সাত থেকে আটজনকে সঙ্গে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় আসাদুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা তাঁকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তাঁরা অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বাইরে থেকে দরজা আটকিয়ে দেন। এতে কক্ষে থাকা চিকিৎসা গ্রহণকারী মোস্তফা কামাল ও চিকিৎসক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অন্য রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করতে না পারায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় সরকারি দায়িত্ব পালন করতে পারেননি উল্লেখ করে ফয়সাল আল আহসান বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভয়ভীতি ও ত্রাসের কারণে রোগী, রোগীদের স্বজন ও হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। পরে তাঁরা বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

বেসরকারি ট্রমা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মো. জুবায়েদের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চিকিৎসক ফয়সাল আল আহসান ট্রমা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন বিকেলে রোগী দেখেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আসাদুজ্জামান অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ওই হাসপাতালে যান। চিকিৎসক ফয়সাল এক রোগীর ভুল চিকিৎসা করেছেন অভিযোগ এনে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাসপাতালের এক কর্মচারীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন আসাদুজ্জামান। অন্যথায় সংবাদ প্রকাশ করা হবে বলে হুমকি দেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাঁরা চিকিৎসক ফয়সালের কক্ষে প্রবেশ করেন। এক রোগীর ভুল চিকিৎসা করানোর বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁদের তর্ক হয়। সে সময় তাঁরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন।

সদর থানা ও সিভিল সার্জনের কাছে করা পাল্টা অভিযোগে আসাদুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর জেলার বেসরকারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তুহিন আহমেদ নামের এক রোগী ডায়ালইসিসের জন্য ফিস্টুলা (অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তৈরি রক্তনালি) করতে চিকিৎসক ফয়সালের কাছে যান। রোগী তুহিন পায়ে বা হাতে ফিস্টুলা করার জন্য চিকিৎসককে বলেন। চিকিৎসক ডায়ালইসিসের জন্য রোগীর গলায় একটি যন্ত্র স্থাপন করে দেন। ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে অভিযোগ নিয়ে আসাদুজ্জামান ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রমা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক ফয়সালের কক্ষে যান। চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে অন রেকর্ডে কথা বলার সময় প্রশ্নের সঠিক উত্তর না দিয়ে আসাদুজ্জামানের মুঠোফোন কেড়ে নেন চিকিৎসক ফয়সাল। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।

তবে ওই রোগীর চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি ছিল না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ফয়সাল আল আহসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অফ রেকর্ডে কথা বলার কথা বলে মো. আসাদুজ্জামান ভিডিও করছিলেন।

চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এসব দেখার জন্য আমি চ্যালেঞ্জ করেছি। ঘটনার পরপর আমি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। আদালতেও ৭ ধারায় মামলা করেছি। কিন্তু চিকিৎসক এখন উল্টা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক ও চিকিৎসক দুজনই অভিযোগ দিয়েছেন। চিকিৎসকের এজাহারটি এখনো মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি। তিনি নিজে তা তদন্ত করছেন। সাংবাদিকের অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে।