মজু‌রি বৃ‌দ্ধিসহ বি‌ভিন্ন দা‌বিতে চা–শ্রমিকদের দুই ঘণ্টা কর্মবির‌তি

সিলেট, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের চা–শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন। এ সময় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন চা–শ্রমিকেরা। চা–শ্রমিকেরা দাবি বাস্তবায়ন না হলে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন।

সিলেট নগরের আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে লাক্কাতুরা চা–বাগানের সামনে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে লাক্কাতুরা চা–বাগান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেতু লোহার, ধিরেন গোয়ালা, লুটন গোয়ালা, সুবল রঞ্জন দাস, রাম বাহাদুর ও রঘু দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে চা–শ্রমিকনেতা রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেট বিভাগের সব বাগানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন এই কর্মসূচি পালিত হবে। দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে কঠোর ও লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কর্মবিরতি পালন শেষে কাজে যোগ দেন শ্রমিকেরা।

কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে চা–শ্রমিকনেতারা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান। তাঁদের দৈনিক মজুরি অবিলম্বে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে। বক্তারা বলেন, বর্তমান শ্রমবাজারে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিকের সংসার চালানো অমানবিক বিষয়। চা–শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত চা–শ্রমিকেরা। ভূমির অধিকার থেকেও চা–শ্রমিকদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। যে বাগানে শ্রমিকেরা বসবাস করেন, সে ভূমির কোনো অধিকার তাদের নেই।

এদিকে সরেজমিনে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা–বাগান, খাইছড়া চা–বাগান ও ফুলছড়া চা–বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা চা–বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। ভাড়াউড়া চা–বাগানের শ্রমিকেরা কর্মবিরতিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। চা–বাগানের নারী শ্রমিক উমা হাজরা বলেন, ‘আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, এ দিয়ে আমাদের চলে না। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাই। খাওয়াদাওয়া ভালো হয় না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালো হয় না। সব কিছুর দাম বাড়ে, আমাদের মজুরি বাড়ে না।’

ভাড়াউড়া চা–বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মো. নুর মিয়া বলেন, চা–শ্রমিকদের এক দিনের মজুরি দিয়ে এক লিটার পেট্রলও কেনা সম্ভব নয়। শ্রমিকেরা কী কষ্টে থাকেন, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছু হয় না।
বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১৯ মাস ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করছি। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানা কমছে না। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগানমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু তাঁরা বারবার টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।’

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি ও কুলাউড়া উপজেলার ১টি চা–বাগানে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। এসব চা–বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে প্রতিটি চা–বাগানের কারখানার সামনে অবস্থান করে কর্মবিরতি পালন ও প্রতিবাদ সভা করেন।

গত রোববার এক সভায় আজকের কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।