স্বপন আলী জানান, ২০১৮ সালে একবার স্থানীয়দের সহায়তায় ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা করিয়েছিলেন ছেলের। সেই সময়ই চিকিৎসক বলেছিলেন, হৃদ্যন্ত্রের ভালভে ছিদ্র রয়েছে। পরামর্শ দিয়েছিলেন অস্ত্রোপচার করার জন্য। তবে টাকা না থাকায় ছেলেকে ফিরিয়ে আনেন বাড়িতে। এরপর রিকশা চালিয়ে খেয়ে না খেয়ে জমাতে থাকেন টাকা। ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরপিডিএস নামের একটি স্থানীয় এনজিওর কাছে ২০২১ সালের ৩ মার্চ নিজের উপার্জনের ১ লাখ টাকা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাওয়া ৫০ হাজার টাকা একই বছরের ১৪ জুন জমা রাখেন তিনি। ছেলের চিকিৎসার জন্য দরকার আড়াই লাখ টাকা। বাকি টাকা জমানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।
ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরপিডিএসের কাছে নিজের উপার্জনের ১ লাখ টাকা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাওয়া ৫০ হাজার টাকা রাখেন স্বপন আলী। সেই টাকা নিয়ে ছয় মাস থেকে এনজিওটির কর্মকর্তারা লাপাত্তা।
ওই সময় এনজিওর পরিচালক আমিনুল ইসলাম ও মনিমুল ইসলাম বলেছিলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য যখনই টাকা চাইবেন, সঙ্গে সঙ্গেই লাভসহ তা দিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য আলাদা সহায়তাও দেওয়া হবে। কিন্তু গত ছয় মাস থেকে তাঁরা লাপাত্তা।
সম্প্রতি শিশু আতিকের অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ভর্তি করিয়েছিলেন ২৫০ শয্যার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় আতিকের মা শারমিন খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহফুজ রায়হান বলেছেন, এখানে আর কোনো চিকিৎসা নেই। শিগগিরই রাজশাহী না হয় ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে।
কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে শারমিন খাতুনের। তিনি বলেন, ‘কোলে আছে ১১ মাসের এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। ছেলেটাকে নিয়েই ছিল যত স্বপ্ন। রিকশা চালিয়ে সংসার চালানোয় চিকিৎসার পুরো টাকা জোগার করা কঠিন স্বামীর পক্ষে। তার ওপর জমা রাখা টাকা নিয়ে পালিয়েছে এনজিও কর্তৃপক্ষ। আমাদের এখন দিশেহারা অবস্থা। কারও সাহায্য ছাড়া ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।’
চিকিৎসক মাহফুজ রায়হান মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিল জন্ম থেকে হৃদ্যন্ত্রের ভালভে ছিদ্র নিয়ে জন্মানো শিশুটি। নিয়ন্ত্রণে আসায় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব রোগী ঘনঘন জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। শিশুটির জীবন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
এনজিও পরিচালক শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম ও সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের মনিমুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।