কুয়াকাটার ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে’ পর্যটকদের জন্য যা থাকছে

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আগামীকাল শুক্রবার শুরু হবে দুই দিনের ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা’ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে বানানো হয়েছে মঞ্চ
ছবি: সংগৃহীত

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি বলা হয় সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে। এবারই প্রথমবারের মতো সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার ও আগামী শনিবার এ আয়োজন সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ আয়োজন করেছে। এতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশ, কুয়াকাটা পৌরসভা, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা, কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কুয়াকাটা প্রেসক্লাব।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভার সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটার শুভ সূচনা হবে। শোভাযাত্রাটি কুয়াকাটার প্রধান সড়ক পার হয়ে পর্যটন পার্কের অনুষ্ঠানস্থলের সামনে গিয়ে শেষ হবে। কুয়াকাটার শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পর্যটনসংশ্লিষ্ট দুটি আলোচনা সভা হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বলেন, ‘পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে আবাসন, যোগাযোগ, খাদ্য, শিল্প, পর্যটনপ্রযুক্তি, শিক্ষাসহ ১২টি বিষয় যুক্ত আছে। আমরা মনে করি, তরুণেরা এসব খাতে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা হতে পারেন। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে কুয়াকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা কুয়াকাটার উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন ধারণা বের করতে চাই।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটার এ আয়োজনের মূল কেন্দ্রস্থল হচ্ছে সৈকতের পর্যটন পার্কের পশ্চিম পাশে। ইতিমধ্যে এখানে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। পশ্চিমমুখী মঞ্চের উত্তর পাশে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির স্টলসহ খাবারের স্টল দেওয়া হয়েছে। ৬০টির মতো স্টল সাজানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাবারের জন্যই থাকছে অন্তত ১৫টি স্টল। এর মধ্যে রাখাইন পিঠা, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, বরা পিঠা, সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছের ফ্রাই, পান্তা ইলিশ, চিকেন ফ্রাই, মাছ-মুরগির বারবিকিউ, চালের রুটি ও হাঁসের মাংস, বিন্নি ভাতের মতো খাবারের পসরা থাকছে।

বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কুয়াকাটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৬০টির মতো স্টল সাজানো হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানের মঞ্চসজ্জাসহ স্টল সাজানোর কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত আয়োজক কমিটির সদস্য সিকদার মোহাম্মদ আলমাস বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে কুয়াকাটায় বেশ কিছুদিন ধরে কোনো পর্যটক আসছেন না। প্রথমবারের মতো এ আয়োজনকে ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে কুয়াকাটায় ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক আসবেন বলে আমরা মনে করছি।’

অনুষ্ঠানস্থলের একটি অংশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শুঁটকির কয়েকটি স্টল থাকবে। থাকবে স্থানীয় রাখাইনদের হাতে তৈরি শাড়ি, চাদর, থামি, ব্যাগ ও ফতুয়া।

সৈকতের মূল অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই বিচ ভলিবল ও বিচ ফুটবলের টুর্নামেন্ট হবে। ফুটবলে অনূর্ধ্ব–১৯ এবং তার চেয়ে বেশি বয়সের খেলোয়াড়েরা অংশগ্রহণ করবেন। ভলিবলে সব বয়সের লোকেরা অংশ নিতে পারবেন।

দুই দিনের এই আয়োজনে আরও থাকছে ফানুস ওড়ানো ও ঘুড়ি উৎসব। বিকেলে ওড়ানো হবে রংবেরঙের ঘুড়ি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উড়বে ফানুস। ১০০টি ফানুস ওড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সাগরের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য আছে কিটকট
ছবি: সংগৃহীত

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, এ উৎসবের খবর শুনে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য হোটেলের কক্ষ ভাড়ায় ২০–৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। এ ছাড়া পর্যটননির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে কিছু কিছু সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কুয়াকাটার প্রতি সবাইকে আকৃষ্ট করতে এ রকম আয়োজন করা হয়েছে।