খোলা জায়গায় বালু ব্যবসা

বালুর ব্যবসার জন্য নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না পৌরবাসী।

হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ রোড এলাকায় চলছে বালু ব্যবসা। সম্প্রতি তোলা
প্রথম আলো

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় যত্রতত্র উন্মুক্ত পরিবেশে বালু ব্যবসার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। খোলা জায়গায় বালু রাখা ও খোলা ট্রাকে বালু পরিবহনের কারণে দিনরাত শহরজুড়ে বালু উড়ছে। এতে মানুষজনের বাড়িঘরে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। বালুর কারণে দোকানপাট খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এমনকি বালুর কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও রোগীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বালু ব্যবসার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও হাজীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কারও ছাড়পত্র নেই বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী, কোথাও বালু রাখলে বা পরিবহন করলে ঢেকে রাখতে হবে। বিধিমালা অমান্য করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। হাজীগঞ্জে উন্মুক্ত স্থানে যত্রতত্র বালু স্তূপ করে রাখার পাশাপাশি খোলা ট্রাকে পরিবহন করা হলেও প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপসহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলছেন, পরিবেশ দূষণ করে চাঁদপুরে খোলা জায়গায় যারা বালুর ব্যবসা করছে, তাদের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান শুরু হবে। এটি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার গুদারাঘাট এলাকা ও ডাকাতিয়া নদীর তীরে হাজীগঞ্জ সেতুর দক্ষিণে উন্মুক্ত স্থানে বিশাল বালুর স্তূপ করে ব্যবসা করছেন মোতালেব মজুমদার, ইকবাল মজুমদারসহ চার ভাই। একইভাবে হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে মো. শাহজাহান ব্যাপারী ও আলীগঞ্জে সাবেক পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী বালু কেনাবেচা করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইট-বালু বিক্রির ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে উন্মুক্ত স্থানে দেদার বালু বেচাকেনা করছেন তাঁরা। যখন-তখন ট্রাকে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পৌরবাসী নীরবে সহ্য করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারও। কারণ, বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, যাঁরাই বালু ব্যবসায় জড়িত, তিনি যে দলেরই হন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ উচ্চপর্যায়ে কথা বলবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ রোডে শেষ প্রান্তে ও ডাকাতিয়া নদীর তীরে মোতালেব মজুমদার ও তাঁর ভাইয়েরা নৌযানে করে বালু এনে দিন-রাত স্তূপ করছেন। এসব বালু ছোট–বড় ট্রাকে তুলে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। বালু ওঠানো–নামানোর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। বিষয়টি নিয়ে এলাকার একাধিক ব্যক্তি গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়।

গুদারাঘাট এলাকার ভবনমালিক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভবনে তিনটি ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে। বালুর কারণে ভাড়াটে এলেও ফিরে যান।

অভিযোগের বিষয়ে মোতালেব মজুমদার বলেন, বালু নৌযানে নদী থেকে আনার পর বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে সরবরাহ করা হয়। মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা লোকজন দিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখছি। তবে সার্বক্ষণিক বালু ওঠানামা করায় তা ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না।’

ইট-বালু ব্যবসার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না, জানতে চাইলে মোতালেব মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে তাঁর ভাই ইকবাল মজুমদার জানেন। ইকবাল বলেন, ট্রেড লাইসেন্স আছে, তবে পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তবে তিনি পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন বলে দাবি করেন।

কয়েকজনকে লাইসেন্স দেওয়ার কথা স্বীকার করে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম মাহবুব আলম বলেন, এখন আর লাইসেন্স দিচ্ছেন না। যেগুলো দিয়েছেন, সেগুলোও দূষণের অভিযোগে নবায়ন করছেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।