কক্সবাজারে এবার নিবিড় অরণ্যের হাতছানি, মেধাকচ্ছপিয়া উদ্যানে তৈরি হলো কৃত্রিম হ্রদ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের শতবর্ষী গর্জনবনে তৈরি দৃষ্টিনন্দন হ্রদ। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি পর্যটকদের নিবিড় অরণ্যে অবসর কাটানোর সুযোগ করে দিতে চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানকে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম হ্রদসহ নানা অবকাঠামো। এক কিলোমিটার লম্বা এই হ্রদের তীরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আড়াই হাজার গাছের চারা। আগামী বছর হ্রদ আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। তৈরি করা হবে ঝুলন্ত সেতু। দুই পাড়ে থাকবে একাধিক বিশ্রামাগার। তবে এর আগে আগামীকাল বুধবার বিশ্ব পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে খুলে দেওয়া হচ্ছে এই হ্রদ।

কক্সবাজার জেলার সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই হ্রদ খনন করেছে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ। গত ২৩ জানুয়ারি হ্রদ খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাশ।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, দৃষ্টিনন্দন এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই হ্রদ পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। হ্রদের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান। উত্তর পাশে গর্জনবনের ভেতরে রয়েছে হেঁটে বেড়ানোর পথ ও ‘ ট্রি অ্যাডভেঞ্চার’–এর ব্যবস্থা। আগামী বছর হ্রদ আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে জানিয়ে আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, এপাড়-ওপাড় যাতায়াতে লেকের ওপর তৈরি করা হবে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু ও একাধিক বিশ্রামাগার। লেকের পানিতে ভ্রমণের জন্য নামানো হবে প্যাডল নৌকা।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি হ্রদের পাড়ে পর্যটকের বসার জন্য বেঞ্চ, কিটকট (চেয়ার ছাতা) বসানো হচ্ছে। ময়লা–আবর্জনা ফেলার জন্য বসানো হয়েছে একাধিক ডাস্টবিন।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের শতবর্ষী গর্জনবনে তৈরি দৃষ্টিনন্দন হ্রদ। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল, দুপুর ও বিকেলে নির্জন হ্রদের পাড়ে বসে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকেরা।

পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে শুনতে বন্য প্রাণী দেখারও সুযোগ রয়েছে। শতবর্ষী গর্জনগাছে ছাওয়া বনাঞ্চলের গভীর প্রশান্তিময় সৌন্দর্য পর্যটকদের প্রকৃতির আরও কাছে নিয়ে যাবে। এই বনে গাছে ওঠার জন্য একাধিক সিঁড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে ট্রি অ্যাডভেঞ্চারও। চাইলে উঁচু গাছে চড়ে বনের শীর্ষভাগের আলো–হাওয়ার খেলা দেখতে পারবেন পর্যটকেরা। এ ছাড়া গভীর বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে হাঁটাপথ। এই পথের মুখেই ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন একটি ফটক।

ফটকের দুই পাশে দুটি হাতির ভাস্কর্যও থাকছে।

৩৯৫ দশমিক ৯২ হেক্টর আয়তনের মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানকে (ন্যাশনাল পার্ক) দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। উদ্যানের ভেতরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী আট হাজারের বেশি গর্জনগাছ। বন বিভাগের দাবি, এই অরণ্যেই দেশের প্রথম ইকো অ্যাডভেঞ্চার প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা। বন বিভাগের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ট্রি অ্যাডভেঞ্চার চালু হয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএসএআইডির ক্রেল প্রকল্পের অধীনে।

মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে এলে পাশের ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কও ঘুরে যেতে পারেন পর্যটকেরা। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম এই সাফারি পার্ক। বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন বেষ্টনীতে আছে সিংহ, বাঘ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, ভালুক, হরিণ, শকুন, কচ্ছপ, রাজ ধনেশ, কাক ধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙ্গিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১ প্রাণী।

ডিএফও মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, লেকের আশপাশে শত শত গর্জনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে আকাশছোঁয়া ঢাকিজাম, ভাদি, তেলসুর ও চাপালিশগাছ। উদ্যানে রয়েছে মেছো বাঘ, হাতি, বানর, উল্টো লেজ বানর, বনবিড়াল, বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামা, গুইসাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী।